নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন বাড়িয়ে ১০০ করতে হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে নারীদের। সাইবার বুলিংয়ের মাধ্যমে রাজনীতি থেকে নারীদের সরিয়ে না দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে মর্যাদা নিয়ে তাঁরা রাজনীতি করতে পারেন।
আজ শুক্রবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অঙ্গসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারার সমালোচনা করেন তাঁরা। নারীর প্রশ্নে গোষ্ঠীস্বার্থ না দেখে নারীর স্বার্থ দেখতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তাঁরা।
রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় জাতীয় যুবশক্তি কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্যে নারীদের প্রত্যয়’। অনুষ্ঠানে নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক মর্যাদা সংরক্ষণ ও জাতীয় উন্নয়নে নারীদের গতিশীল অংশগ্রহণকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
সেমিনারে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, নারীরা রাজনৈতিকভাবে সব সময় তাঁদের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় সব সময় পকেট গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, যেখানে কখনো নারী ছিল না। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরও নারীদের পদ্ধতিগতভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি থেকে নারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। বোঝানো হয়েছে, নারীরা রাজনীতিতে অনিরাপদ। তিনি বলেন, রাজনীতিতে পুরুষেরা যে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকেন, সেই ঝুঁকি নারীরাও নিতে রাজি রয়েছেন। তাই বলে সাইবার বুলিং, হয়রানি করে নারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মেনে নিতে রাজি নন নারীরা। এ ধরনের হয়রানির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনীম জারা বলেন, ‘রাজনীতিতে নারীর প্রসঙ্গ এলেই বলা হয়, নারীরা কি রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন? নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন? অর্থাৎ রাজনীতিতে পুরুষের যোগ্যতা নিয়ে আমরা যত চিন্তিত, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তিত নারীর যোগ্যতা নিয়ে। আমরা এতটাই চিন্তিত হই যে রাজনীতিতে নারীর চলার পথ বন্ধ করে দিই।’ তিনি আরও বলেন, পরিবেশ যদি বৈরী হয়, তাহলে নারীরা রাজনীতিতে টিকতে পারবেন না। তখন আবার একটি গোষ্ঠী বলবে, নারীরা টিকতে পারেননি। নারীর রাজনৈতিক সহায়ক পরিবেশ না থাকলে রাজপথে নারীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি দীর্ঘ মেয়াদে নারী নেতৃত্বের প্রক্রিয়া তৈরিতে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা এবং সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবিন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো দলের প্রতিটি কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। তাদের হাত ধরেই সংরক্ষিত আসনে ৫ শতাংশ করে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত এল। রাজনৈতিক মতাদর্শ যা–ই হোক, নারীর অধিকার প্রশ্নে সব দলকে এক থাকতে হবে। কে হিজাব পরল, কে হাতাকাটা পোশাক পরল—সেই বিবেচনায় কোনো নারীকে বাতিল করা যাবে না। মতের মিল না হলে, রাজনৈতিক বোঝাপড়া এক না হলে সেই নারীকে নাকচ করে দেওয়ার প্রবণতা থেকে সরে আসতে হবে। এই প্রবণতার মাধ্যমে গোষ্ঠীস্বার্থ কায়েম হলেও দেশের ক্ষতি। যোগ্য নারীদের জন্য নেতৃত্বের পথ খুলে দিতে হবে, দলের মধ্যে ক্ষমতায়িত করতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর নার্গিস বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে বড় দলগুলো এত বছরেও দলের প্রতিটি কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা নারীরা সমানসংখ্যক প্রতিনিধিত্ব চাই। পেশিশক্তি, কালোটাকা, পরিবারতন্ত্রের কারণে অনেক যোগ্য নারীও সামনে এগোতে পারেন না।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য সমানভাবে নারী ও পুরুষের কথা বলতে হবে। এত দিন ধরে যে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছিল, তাতে নেতার বউ, নেতার বোন সংরক্ষিত আসনে মনোনীত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। প্রত্যেকের ভোটের সমান দাম। অথচ নারীকে এমন ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় যে তাঁরা প্রান্তিক। জুলাইয়ে নারীরা ছিল সামনের সারিতে। এই নারীদের আর হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না।
জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে নারীর মর্যাদা থাকবে। গণ–অভ্যুত্থানের বাংলাদেশে নারীর জন্য কতটুকু সুযোগ তৈরি করা গেছে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে দুজন নারী সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় যুবশক্তির সদস্যসচিব জাহেদুল ইসলাম, মুখ্য সংগঠক ফরহাদ সোহেল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা বুশরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় যুবশক্তির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী প্রীতি।