[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নেই সড়ক, তবু দাঁড়িয়ে চার কালভার্ট

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাউজানের পাহাড়তলী চৌমুহনী বাজারের কাপ্তাই সড়কের পাশে পরপর নির্মিত হয়েছে চারটি কালভার্ট। গতকাল বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

সামনে ধানখেত আর পতিত জমি। জনবসতি নেই। নেই কোনো স্থাপনা ও সড়ক। এরপরও সেখানে যাওয়ার জন্য করা হয় একে একে চারটি কালভার্ট। এক কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে চারটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছিল গণ-অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এসব কালভার্ট এখন পড়ে আছে অব্যবহৃত, অকার্যকর অবস্থায়।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশের খাদে এই চার কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। বাজারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কার্যালয়ের বিপরীতে মাত্র ২৫০ মিটারের ভেতরে কালভার্টগুলো তৈরি করা হয় প্রায় সাত বছর আগে। ওই সময় বলা হয়েছিল, এখানে সরকারি কিছু দপ্তর, যেমন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সার্কেল কার্যালয়, হাইওয়ে থানা ও খাদ্যগুদাম গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এত দিনেও কোনো প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, ধানখেতের মধ্য দিয়ে বানানো কালভার্টগুলোর চারপাশে কোথাও কোনো রাস্তা নেই। নেই কোনো ভবন বা সরকারি স্থাপনার চিহ্নও। এগুলোর ওপর এখন বাজারের আবর্জনা ফেলা হয়। এ কারণে প্রতিটি কালভার্ট কয়েক ফুট ময়লায় ঢেকে আছে। মূলত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের ২০ ফুট দূরত্বের ধানি জমির পাশের খাদের ওপর নির্মিত হয়েছে এসব কালভার্ট। সেখানে কোনো খালও নেই। কালভার্টের পরেই শত শত একরের ধানি জমি, যেগুলোতে এবারও ধান চাষ করেছেন জমির মালিকেরা।

সড়ক না থাকলে সাধারণত সেতু-কালভার্টের প্রকল্প নেওয়া হয় না। কিন্তু ওই সময়ের সংসদ সদস্যের নির্দেশনায় এগুলো হয়েছে। হয়তো সেটা সঠিক হয়নি।

— আয়েশা সিদ্দিকা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), রাউজান উপজেলা

দেখা যায়, সারি করা চারটি কালভার্ট। আড়াআড়িভাবে নির্মিত একটি থেকে আরেকটি কালভার্টের দূরত্ব ২৫০ ফুট হবে। ৪টি কালভার্টেরই দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট, প্রস্থ ১৫ ফুট করে। বাজারের ময়লা-আবর্জনা এখন এই চার কালভার্টে ফেলে যান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই চার কালভার্টের নাম দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ রাউজান খাদ্যগুদাম সড়ক বক্স কালভার্ট, দক্ষিণ রাউজান হাইওয়ে থানা সড়ক বক্স কালভার্ট, রাউজান-রাঙ্গুনিয়া পুলিশ সার্কেল কার্যালয় সড়ক বক্স কালভার্ট ও দক্ষিণ রাউজান ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সড়ক বক্স কালভার্ট। প্রতিটিতে ২৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা করে চারটি কালভার্টে মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

কালভার্টগুলো নির্মাণের সময় সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, যিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাঁর মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘সড়ক না থাকলে সাধারণত সেতু-কালভার্টের প্রকল্প নেওয়া হয় না। কিন্তু ওই সময়ের সংসদ সদস্যের নির্দেশনায় এগুলো হয়েছে। হয়তো সেটা সঠিক হয়নি।’

রাউজান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অংছিং মারমা জানান, এসব প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই। রাউজান-রাঙ্গুনিয়া পুলিশ সার্কেলের এএসপি নুরুল আমিন বলেন, এখনো সার্কেল কার্যালয়ের জন্য জমিই অধিগ্রহণ করা হয়নি।

দেখা যায়, সারি করা চারটি কালভার্ট। আড়াআড়িভাবে নির্মিত একটি থেকে আরেকটি কালভার্টের দূরত্ব ২৫০ ফুট হবে। ৪টি কালভার্টেরই দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট, প্রস্থ ১৫ ফুট করে। বাজারের ময়লা-আবর্জনা এখন এই চার কালভার্টে ফেলে যান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, উপজেলার অনেক এলাকায় এখনো খালের ওপরে সেতু না থাকায় সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। জলদাশপাড়ার জালিয়ে খালে বহু বছর ধরে সেতু না থাকায় গ্রামবাসী দুর্ভোগে আছে। আরডি মুহাম্মদীয়া সড়কের দমদমা সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়, দেওয়ানপুর-পাঁচখাইন সড়কের সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলই বন্ধপ্রায়।

ইমাম গাজ্জালী ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আয়ুব খান বলেন, একটি জায়গায় চারটি কালভার্টের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি ছিল একজন সংসদ সদস্যের ইচ্ছাপূরণের প্রকল্প। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষক মুহাম্মদ জাহিদ কাদেরী বলেন, ‘আমার বাবার চাষাবাদ করা জমির পাশ দিয়েই কালভার্ট বানানো হয়েছে। ভূমিমালিকদের কিছু না জানিয়ে জমি দখলের পথ তৈরি করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, এভাবে একসঙ্গে চারটি কালভার্ট নির্মাণ অনিয়মের শামিল। সরেজমিন এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী বলেন, একটি সেতুর জায়গায় একসঙ্গে চারটি কালভার্ট করা মানে প্রকল্প বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা। এভাবে সরকারের অর্থের অপচয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া উচিত।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন