[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

৩৮ বছর শিক্ষকতার পর এখন লেবু বেচেন লতিফ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

শিক্ষক আবদুল লতিফ এখন যশোর সার্কিট হাউসের সামনে পথের ধারে বসে লেবু বিক্রি করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

আবদুল লতিফ ৩৮ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি অবসরে যান। এখন তাঁর বয়স ৭৪ বছর। জীবনসায়াহ্নে এসে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে চলার জন্য তিনি গত এক বছর পথের ধারে বসে লেবু বিক্রি করেন। তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই তাঁর, বরং তিনি মনে করেন, কোনো কাজই ছোট নয়।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আবদুল লতিফ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করলেও বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তালিকাভুক্ত পরীক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নেন।

অবসরকালীন যে টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে যশোর শহরের পোস্ট অফিস পাড়ায় দুইতলা একটি বাড়ি করেন। বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে তিনি নিজে থাকেন আর অপর ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছেন। ওই ভাড়ার টাকা ও টিউশনি করে অবসরের পর জীবন চালাতেন তিনি। বছর তিনেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর থেকে আর টিউশনি করতে পারেন না।

এক বছর ধরে আবদুল লতিফ বাজার থেকে লেবু কিনে যশোর সার্কিট হাউসের সামনে রাস্তার পাশে নিয়ে বিক্রি করেন। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি কাজটি করেন। এতে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়। বাড়িভাড়ার মাসিক ৯ হাজার টাকার সঙ্গে লেবু বিক্রি করে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে সংসার।

গত শনিবার রাত ১০টার দিকে যশোর সার্কিট হাউসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, লতিফ অল্প কিছু কাগজি লেবু নিয়ে ফুটপাতে বসে আছেন। আলাপচারিতার মাঝে তিনি বলেন, ‘আমি ৩৮ বছর শিক্ষকতা করেছি। ইংরেজি পড়াতাম। শত শত মেয়েকে মানুষ করেছি। অনেকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমার সেই মেয়েরা মাঝেমধ্যে আমাকে দেখে যায়। তারা একটু গোস্‌সা করে আমাকে এ অবস্থায় দেখে। কিন্তু কী করব, বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না। আবার জীবিকার জন্য কিছু টাকাও তো প্রয়োজন। বাড়িতে বসে না থেকে বিকেলে কিছু লেবু কিনে এনে বসি। এতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়। এতে আমার সংসার চলে যায়।’

আবদুল লতিফের বাড়িতে এখন পাঁচজন থাকেন। তাঁর স্ত্রী তিন বছর আগে মারা গেছেন। একমাত্র ছেলে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি আর জেঠাস থাকেন বাড়িতে। আলাপে আলাপে লতিফ বললেন, বাড়িতে থাকলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলা যায় না। একাকী লাগে। এখানে বসলে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়। সঙ্গ পাওয়া যায়। এটাও–বা খারাপ কী! তা ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকায় কোনো কাজকে ছোট মনে করা হয় না। তিনিও কাজটাকে ছোট মনে করেন না।

যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি বিদ্যালয় যোগদান করি ২০১৩ সালে। এক বছর পর ২০১৪ সালে আবদুল লতিফ সাহেব অবসরে যান। তিনি বিকম পাস করলেও ইংরেজি ক্লাস নিতেন। তিনি মানুষ হিসেবে ভালো ছিলেন। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন