‘আমাগো সংসার চালাইন্না ওই মেশিনডা মইরা গেছে’
![]() |
ছেলে হারানোর শোকে আহাজারি করছেন কাইয়ুমের মা সালেহা বেগম। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রসুনিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘সংসারে অভাব, বড় পোলা আর আমার চিকিৎসার খরচ চালাইতে যে কাম পাইত, ওই কামই করত। দিন-রাইত যন্ত্রের মতো শরীর চালাইত। আমাগো সংসার চালাইন্না ওই মেশিনডা মইরা গেছে। গাড়ি চাপা দিয়া আমার পোলাডারে মাইরালাইছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কাইয়ুমের (২২) মা সালেহা বেগম (৬৫)। শুক্রবার দুপুরে সিরাজদিখান উপজেলার রসুনিয়া ইউনিয়নের খিলপাড়া এলাকায় কাইয়ুমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা আহাজারি করে যাচ্ছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরাও কাঁদছেন।
সালেহা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর ছোট ছেলে কাইয়ুম সংসারের হাল ধরেন। বড় ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় কাইয়ুমই সংসারের একমাত্র ভরসা ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে প্রাইভেট কারের চাপায় কাইয়ুমসহ মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হন। শ্রীনগর থেকে কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাঁরা সবাই টাইলসমিস্ত্রি এবং সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন।
দুর্ঘটনায় নিহত অন্য দুজন হলেন কাইয়ুমের প্রতিবেশী আওলাদ হোসেন (২৩) ও আওলাদের চাচা হাবিব শেখ (২২)।
হাবিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি দোচালা টিনের ঘরে চৌকিতে বসে আছেন তাঁর মা–বাবা, পাশে বসে আছেন স্বজনেরা। ছেলেকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ তাঁর মা–বাবা।
হাবিবের মা রাজু বেগম বলেন, হাবিব ছিল তাঁদের একমাত্র ছেলে ও সংসারের প্রধান অবলম্বন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
হাবিবুরের ঘরের উত্তর পাশের জরাজীর্ণ টিনের ঘরটি আওলাদ হোসেনের। আওলাদও ছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য। সন্তানের মৃত্যুর পর থেকে মাটিতে শুয়ে আহাজারি করছেন মা জোবেদা বেগম। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন বাবা আনোয়ার হোসেন। জোবেদা বেগম বলেন, ‘পোলাডায় কামের কথা কইয়া বাড়ি থেইকা গেল, আইল লাশ হইয়া। আমি এইডা কেমনে মাইন্না লমু? আমার পোলারে ছাড়া আমি কেমনে থাকমু?’
নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, চারজন মিলে কিছুদিন আগে পুরোনো একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন কাজের সুবিধার জন্য। সেই মোটরসাইকেলেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনজনের জীবন ঝরে গেল।
আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জানাজা শেষে নিহত ব্যক্তিদের লাশ স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আবু নাঈম ছিদ্দিক জানান, দুর্ঘটনায় জড়িত প্রাইভেট কারের মালিক ও চালককে শনাক্তের কাজ চলছে। খুব শিগগির দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন