চাঁদপুরে বিসিআইসি গুদাম নির্মাণে বাধা, গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ
![]() |
বিসিআইসি বাফার নির্মাণ কাজের চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে আটকে রাখা হয়েছে। কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গাড়িগুলো চাঁদপুর ওয়ারলেস সেতুর কাছে পড়ে আছে। শনিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চাঁদপুরে সরকারি বিসিআইসি বাফার গুদামের জন্য বালু দিয়ে জমি ভরাটের কাজে পরপর দুবার বাধা দেওয়া, ঠিকাদারের চারটি গাড়ি ভাঙচুর ও আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ২০ ও ২১ আগস্ট শহরতলির জেলখানা ও ওয়্যারলেস সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক, থানা ও সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঘটনার পর থেকে তাদের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে ভরাটকাজ বন্ধ আছে।
বিসিআইসি বাফার গুদাম নির্মাণের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ ২১ আগস্ট চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এবং পাশে থাকা সেনাবাহিনীর ক্যাম্পেও বিষয়টি জানানো হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. বাহার মিয়া বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, অ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড চাঁদপুরে বিসিআইসি বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভূমি উন্নয়ন কাজ করাচ্ছে সম্রাট ট্রেডার্স অ্যান্ড আল বুরুজ বিডি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে। ১৬ আগস্ট বালু ভরাট কার্যক্রম শুরু করা হয়। ২০ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার দিকে চাঁদপুর জেলখানার পাশে বালুভর্তি ট্রাক লোডিং পয়েন্ট থেকে প্রকল্প সাইটে যাচ্ছিল। এ সময় অজ্ঞাতনামা কয়েকজন দুর্বৃত্ত সেটির গতি রোধ করে এবং ট্রাকের সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে। পরদিন বিকেল পাঁচটার দিকে আবার কিছু দুর্বৃত্ত ওয়্যারলেস ব্রিজের কাছে ট্রাকসহ পার্কিংয়ে থাকা আরও তিনটি ট্রাকের সামনের গ্লাস ও লুকিং গ্লাসসহ সব গ্লাস ভাঙচুর করে। এর আধা ঘণ্টা পর দুর্বৃত্তরা আবার ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের চালকদের কাছ থেকে জোর করে চাবি কেড়ে নেয়।
এ ঘটনার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়টি জানার পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বালু ভরাটের কাজ বন্ধ আছে। ট্রাকগুলো ওয়্যারলেস সেতুর পাশে একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। সেখানে বিসিআইসির দুই নিরাপত্তাকর্মী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ঘটনার বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মী আলমগীর খান বলেন, ‘এখানে তেমন কোনো ঘটনা দেখিনি। তবে তিন–চার দিন আগে ১০ থেকে ১২ জন মোটরসাইকেল নিয়ে এই সাইটে আসেন। কিন্তু কী হয়েছে, জানি না।’
বালু ভরাটের দায়িত্বে থাকা সাব–ঠিকাদার সম্রাট ট্রেডার্সের আলিমুজ্জামান সম্রাট বলেন, ‘আমরা বিসিআইসি বাফার সারের গুদামের জন্য বরাদ্দকৃত চার একর জমিতে ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় বালু ভরাটের কাজ নিয়েছি। ১৬ আগস্ট ওয়্যারলেস এলাকার কালামের বালুমহাল আমাদের বালু দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু ১৭ আগস্ট স্থানীয় আশিকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিন্টু মিজির নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন এই কাজের ভাগ হিসেবে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেন। নতুবা কাজ বন্ধ থাকবে বলে হুমকি দেন। পরে তাঁদের পুরো কাজটাই নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় অথবা ফিফটি ফিফটি শেয়ার করার কথা বলি। এতে তাঁরা রাজি হননি। তাঁরা প্রতি ঘনফুট বালু তিন টাকা করে দাবি করেন। কিন্তু আমি তাঁদের প্রতি ঘনফুট ২৫ পয়সা করে দিতে প্রস্তাব দিলে তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে আশিকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মিন্টু মিজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব সত্য নয়। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কেউ যদি করে থাকেন আমাদের বলেন, আমরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। অভিযোগকারীকে বলেছি, আপনারা আসেন, কেন কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানান। সরকারি কাজ কেউ বন্ধ করা বা রাখার সুযোগই নেই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন