{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

দাপুটে জয়ে সিরিজে এগিয়ে তাসকিন-লিটনরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

জয়ের পর সাইফ হাসানের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়লেন অধিনায়ক লিটন দাস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

নেহাত টি–টোয়েন্টি বলেই হয়তো! এ ছাড়া আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গেটের তালা ভেঙে হাজারখানেক দর্শক ঢুকে যাওয়ার আর কী কারণ থাকতে পারে? তাঁদের বেশির ভাগের হাতেই টিকিট ছিল। কিন্তু অনলাইনের ওই টিকিট স্ক্যান করে ঢোকার মতো ধৈর্য হয়নি। খেলা ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে, টি–টোয়েন্টি সংস্করণে সময়ও অল্প—এর মধ্যেই আবার চার–ছক্কা কিংবা উইকেট নেওয়ার দেখার আনন্দ হারাতে আর কে–ইবা চায়!

শেষ পর্যন্ত দর্শকদের এই উত্তেজনায় জল ঢালার মতো একটা ম্যাচই হয়েছে— প্রায় নিরুত্তাপ এক ম্যাচ দেখে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাঁদের। তবে তা বাংলাদেশের দাপুটে জয় দেখার আনন্দটা সঙ্গী করে। তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে নেদারল্যান্ডস হেরে গেছে ৮ উইকেটে। দর্শক যা দেখতে পেরেছেন, সেখানে তাসকিন আহমেদের ৪ উইকেট নেওয়াই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।

তাসকিনের আগুনে বোলিং, লিটন দাসের ঝড় তোলা ব্যাটিং ছাড়াও এই ম্যাচ থেকে আরও একটা প্রাপ্তি অবশ্য আছে—সাইফ হাসানের বোলিং। প্রায় দুই বছর ধরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলা এই ক্রিকেটারকে যে একেবারে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে নেওয়া হলো, সেটির পেছনে যুক্তি তো ছিল তাঁর এই হাত ঘোরানোর শক্তিটাই।

মাঝবিরতিতে সম্প্রচারকদের সাইফ বলেছেন, কঠোর পরিশ্রম আর প্রক্রিয়ার ফল তাঁর এমন বোলিং। সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারার স্বস্তিও ছিল তাঁর কণ্ঠে। সাইফের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারা যে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের বাকিদের জন্যও স্বস্তির, তা তো বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশের বোলারদের দাপটের কথা বলার ফাঁকে নেদারল্যান্ডসের ‘ভালো’ যদি বলতেই হয়, তাও ওই বাংলাদেশের বোলিংয়ের সময়েই। ইনিংসের শুরুটা টি–টোয়েন্টিসুলভই করেছিলেন ডাচ ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড। মেহেদী হাসানের প্রথম ওভারে ৪ বল খেলে ২ রান করেছিলেন বটে, কিন্তু শরীফুল ইসলামের পরের ওভারে নিয়ে নেন ১৩ রান।

তৃতীয় ওভারে আসা মেহেদীর ওভার থেকেও নেন ৯ রান, যাতে ছিল একটি ছক্কাও। কিন্তু তাঁকে বিধ্বংসী হওয়ার আগেই পরের ওভারের প্রথম বলে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্যটা এনে দেন তাসকিন আহমেদ। তাঁর বলে জাকের আলী ও’ডাউডের ক্যাচ নিতেই থমকে যায় নেদারল্যান্ডসের টি–টোয়েন্টিসুলভ যাত্রা।

পরের ব্যাটসম্যানরা যে একেবারে রান করেননি, তা নয়—তেজা নিদামানুরু ২৬ বলে ২৬, টিম প্রিঙ্গল ১৪ বলে ১৬ আর আরিয়ান দত্ত শেষ দিকে ৮ বলে অপরাজিত থেকেছেন ১৩ রানে। তাতে ডাচদের সংগ্রহটা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সিলেটের ‘ভালো’ উইকেটে জিততে যা দরকার, তা পাওয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলতে পারলেও স্কোরবোর্ডে ৮ উইকেটে ১৩৬ রানের বেশি হয়নি। একটা স্বস্তি অবশ্য তারাও পেতে পারে—বাংলাদেশের খেলা শেষ ৬ টি–টোয়েন্টিতে এটি কোনো দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

তবু বাংলাদেশের জন্য এই রানটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠলে তা বড় একটা বিপদের কথাই হতো। সিলেটের মতো উইকেট এশিয়া কাপেও থাকবে—তা সহায়ক হবে ব্যাটসম্যানদের জন্য। এমন কথা ম্যাচ শুরুর দুদিন আগেই বলে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস।

তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য তাই চ্যালেঞ্জটা বরং ছিল, ম্যাচটা কত আগে শেষ করা যায়। তা সেটি শেষ হয়েছে ১৩.৩ ওভারেই। যে যাত্রার সূচনাটা করে দিয়ে গিয়েছিলেন ওপেনার পারভেজ হোসেন। ৪, ৪, ৬—ডাচ বোলার আরিয়ান দত্তের করা প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলই পাঠিয়ে দিয়েছেন সীমানার বাইরে।

তাঁর ইনিংসটা পরে যদিও আর খুব বড় হয়নি। পরের ৬ বলে মাত্র ১ রান করে আরিয়ান দত্তের বলেই বোল্ড হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় তাঁকে।

কিন্তু তাঁর ফেরা ম্যাচে তেমন বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি। তানজিদ হাসানের সঙ্গে ৩৯ বলে ৬৬ রানের জুটিতে খেলাটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন লিটন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে শুধু পারভেজের উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৫৭ রান তোলে।

দশম ওভারে গিয়ে ভাঙে তানজিদের সঙ্গে লিটনের জুটি। টিম প্রিঙ্গলের ওভারে দুই চারে ২৪ বলে ২৯ রান করে আউট হয়ে যান তানজিদ। কিন্তু এরপর আর সাফল্যের দেখা পায়নি ডাচরা। বল হাতে ভালো করা সাইফ জ্বলে উঠেছেন ব্যাটিংয়েও, তাতে তাঁর আর দলের স্বস্তিটা হয়তো বেড়েছে আরও। ১৯ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে অপরাজিত ৩৬ রানে দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন। সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক লিটন দাস। শুরু থেকেই যাঁর ব্যাট দারুণ ছন্দে। ২৬ বলে ফিফটি করেছেন। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ২৯ বলে ৫৪ রান করে। যাতে ছিল ৬টি চার ও ২টি ছক্কা।

৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তাসকিন, সবচেয়ে বেশি রান লিটনের। তবে বাংলাদেশের ম্যাচটাতে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কি সাইফ হাসান? হয়তো তা–ই।

 সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (ও’ডাউড ২৩, ভিক্রামজিৎ ৪, নিদামানুরু ২৬, এডওয়ার্ডস ১২, শারিজ ১৫, ক্রোস ১১, ক্লেইন ৯, প্রিঙ্গল ১৬*, আরিয়ান ১৩; মেহেদি ৪-০-২১-০, শরিফুল ৪-১-৩০-০, তাসকিন ৪-০-২৮-৪, মুস্তাফিজ ৪-০-১৯-১, রিশাদ ২-০-১৬-০, সাইফ ২-০-১৮-২)।

বাংলাদেশ: ১৩.৩ ওভারে ১৩৮/২(পারভেজ ১৫, তানজিদ ২৯, লিটন ৫৪*, সাইফ ৩৬*; আরিয়ান ৩-০-৩০-১, ক্লেইন ২-০-২৬-০, ডোরাম ৩-০-২৩-০, ফন মিকেরেন ২-০-১৭-০, শারিজ ১-০-১২-০, প্রিঙ্গল ২-০-১৬-১, ভিক্রামজিৎ ০.৩-০-১৪-০)

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: তাসকিন আহমেদ।  

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন