[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মেয়ের জন্য বাঁচতে চেয়েছিলেন, ডেঙ্গু কেড়ে নিল চিকিৎসক তাহসিনকে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

স্বামী তৌহিদুল ও মেয়ে সুহাইরার সঙ্গে তাহসিন আজমী | ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

দেড় বছরের সুহাইরা কখনো খেলছে, আবার কখনো কাঁদছে খিদেয় কিংবা মায়ের কোলের জন্য। ছোট্ট দুধের শিশুটি বুঝতে পারছে না তার মা আর কখনো ফিরবেন না। অথচ এই সুহাইরার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলেন মা চিকিৎসক তাহসিন আজমী। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে সুহাইরার জন্য বাঁচতে হবে।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার মৃত্যু হয় তরুণ চিকিৎসক তাহসিন আজমীর। তিনি চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) ইয়ংওয়ান লিমিটেডে চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন। স্বামী তৌহিদুল ইসলাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। থাকতেন হালিশহর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়।

২৯ জুলাই তাহসিন আজমীর জ্বর আসে। পরদিন পরীক্ষা করা হয়। তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ৩১ জুলাই তাহসিনের রক্তে অণুচক্রিকা ৩০ হাজারে নেমে আসে। তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। গত শুক্রবার সকালে নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাহসিনকে।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেট্রোপলিটন হাসপাতালে রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। তাকে এইচডিইউতে নেওয়া হয়। কিন্তু ওখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো হচ্ছিল ধীরগতিতে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও দেখছিলেন। হাসপাতাল থেকে রোগী ভালো আছে বলা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।’

২৯ জুলাই তাহসিন আজমীর জ্বর আসে। পরদিন পরীক্ষা করা হয়। তাঁর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ৩১ জুলাই তাহসিনের রক্তে অণুচক্রিকা ৩০ হাজারে নেমে আসে। তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার সকালে নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাহসিনকে।

দিশাহারা তৌহিদুল ইসলাম কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। দ্রুত খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। মেট্রোপলিটন হাসপাতালে সারা রাত স্ত্রীর হাত ধরে বসে ছিলেন তৌহিদুল। বেঁচে থাকার জন্য তরুণ চিকিৎসক তাহসিনেও প্রাণপণ লড়াই করছিলেন।

তৌহিদুল বলেন, ‘তাহসিনের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আমার হাত ধরে ছিল সে। আর বারবার বলেছে আমাকে সুহাইরার (মেয়ে) জন্য বাঁচতে হবে। এটাই তার শেষ কথা। এরপর জ্ঞান হারায়। পরে লাইফ সাপোর্টে চলে যায়। আমরা তাকে রোববার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে রাতে মারা যায়।’

তাহসিন আজমী ও তাঁর স্বামী তৌহিদুল ইসলাম | ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

বলতে বলতে গলা ধরে আসে তৌহিদুল ইসলামের। আসবে নাই–বা কেন! ১৪ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর তৌহিদুল ও তাহসিনের বিয়ে হয় চার বছর আগে। তাঁদের একমাত্র সন্তান দেড় বছরের সুহাইরা আজমী। মেয়েটি এখন এক-আধটু কথা বলতে পারে।

তাহসিনের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আমার হাত ধরে ছিল সে। আর বারবার বলেছে আমাকে সুহাইরার (মেয়ে) জন্য বাঁচতে হবে। এটাই তার শেষ কথা। এরপর জ্ঞান হারায়। পরে লাইফ সাপোর্টে চলে যায়।

— তৌহিদুল ইসলাম, তাহিসন আজমীর স্বামী

 
সোমবার বিকেলে বাঁশখালীর পালেগ্রাম তাহসিনের দাদার বাড়িতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। মায়ের শেষযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিল সুহাইরা। সে খুঁজছে মাকে। ভাবছে, মা আসবে একটু পর।

স্ত্রীর শেষবিদায়ের ক্ষণটির আবেগঘন বর্ণনা দেন তৌহিদুল, ‘বাচ্চা তো মাকে খুঁজবেই। জানি না কীভাবে বোঝাব তাকে। এখনো বাসায় এসে মাকে খুঁজছে। আল্লাহ যেন তাকে মা ছাড়া বাঁচার শক্তি দেন। আজ কবরের সামনে দাঁড়িয়ে সুহাইরা মাকে উড়ন্ত চুমু খেয়েছে। আর বলেছে, মা আসো, মা আসো...।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন