নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান | অলংকরণ: পদ্মা ট্রিবিউন |
শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম শাহাদাতবার্ষিকী। এবারও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফিরে এসেছে দিনটি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ত্যাগ করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়।
১৫ আগস্ট উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছে জাসদের দুই অংশ। গতকাল বাংলাদেশ জাসদের বিবৃতিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের অপরাধের কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করা যায় না। তেমনি শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকেও খাটো করা যাবে না। সংগঠনের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এ বিবৃতি দিয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা। ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাঙালির হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসন থেকে বঙ্গবন্ধুকে ম্লান করা যাবে না।
গত ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তার আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। ফলে ১৫ আগস্ট ঘিরে দলটি কোনো কর্মসূচি পালনের সুযোগ পাচ্ছে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন শাহাদাতবরণ করেন তাঁর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল ও ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল এবং নবপরিণীতা দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় জীবন রক্ষা পায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার।
পঁচাত্তরের বিয়োগান্ত হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এলে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ হত্যাকারীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। পরে বিদেশে পলাতক আরও একজনকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরও পাঁচজন বিদেশে পলাতক।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা জোরদার
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে পুলিশের এপিসি ও রায়টকার মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য নিয়োজিত করা হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ৩২ নম্বরে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা গেছে। দলের স্থানীয় বিভিন্ন নেতার নাম উল্লেখ করে দফায় দফায় মিছিল করেন কিছু নেতাকর্মী। তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেন। আজ শুক্রবার সারাদিন সেখানে থাকবেন বলে জানান তারা। এ সময় অপরিচিত অনেকের মোবাইল ফোন সেট তল্লাশি করতে দেখা গেছে। সেখানে ‘সন্দেহজনক’ ঘোরাঘুরির অভিযোগে তিনজনকে আটক করা হয়। ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, আটক তিনজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সন্দেহে ছাত্রশিবিরের ঢাকা কলেজ ইউনিটের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. মামুনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত শিবির নেতার অভিযোগ, তিনি এখানে আসার পর কিছু লোক তাঁকে মারধর করে। কাছেই পুলিশ ছিল। তিনি অনেক ডেকেও পুলিশের কোনো সাড়া পাননি। এ সময় আহাদ নামে ঢাকা কলেজ ছাত্রশিবিরের এক সদস্যকেও মারধরকারীরা ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যায়। রাত ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে আরেকজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে।
রাত ১১টার দিকে শুক্রাবাদ মোড়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, চলন্ত একটি গাড়ি থেকে ককটেল ছোড়া হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সড়কটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এটা হয়তো দুএক দিন থাকবে। কিছু দিন ধরেই নানা ষড়যন্ত্র চলছে। পুলিশ বলছে, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ সমবেত হতে পারবে না। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
সারাদেশে গ্রেপ্তার
২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে এক হাজার ৮৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগের দিন গ্রেপ্তার হন এক হাজার ৮৫৮ জন। এ ছাড়া রাজধানীতে ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এদিকে পুলিশ সদরদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত রয়েছেন এক হাজার ২২০ জন। অভিযানে একটি তলোয়ার, একটি লোহার পাইপ, একটি তালা কাটার, একটি লোহার চাবুক, একটি কোঁচ, দুটি তীর, একটি একনলা বন্দুক, ১৩ রাউন্ড কার্তুজ, একটি দেশে তৈরি এলজি, এক রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ (সিসা) উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত যে কোনো ধরনের ফানুস ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ১৫ আগস্ট ঘিরে গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের জেলা থেকে পুলিশ সদস্যদের গোপালগঞ্জে আনা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যদের পাশাপশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত।
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. সারোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ১৫ আগস্ট সামনে রেখে গোপালগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যতটুকু ঝুঁকি আছে, সেটি মোকাবেলা করার মতো পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে।
শোক দিবস পালন না করার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে এ ধরনের কাজের দায়িত্ব-সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার দিনকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। এ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। দিবসটি ‘ক’ শ্রেণির জাতীয় দিবস হিসেবে সারাদেশে পালিত হতো। অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ১৩ আগস্ট এ ছুটি বাতিল করে।