[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কালীগঙ্গার বুকে নৌকাবাইচ, দুই পাড়ে হাজারো মানুষের উল্লাস

প্রকাশঃ
অ+ অ-

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

গ্রামীণ জনজীবনে নৌকাবাইচ একটি প্রাণের উৎসব। বর্ষার পর নদী যখন পানিতে  টইটম্বুর, তখনই নদীপাড়ের গ্রামগুলো রঙিন হয়ে ওঠে এই প্রতিযোগিতাকে ঘিরে। শনিবার বিকেলে ‘নদীদূষণ রোধ করি, নির্মল বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

এ উপলক্ষে নদীর দুই পাড়ে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ আর দর্শকদের উল্লাসে মুখর হয়ে ওঠে নদীর দুই পাড়। লম্বা সরু নৌকায় একসঙ্গে বইঠা চালান অনেক মাঝি। সমস্বরে বইঠার ছন্দ আর তালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হয়ে ওঠে উৎসবের রঙিন চিত্র। নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী হাজারো মানুষের ভিড়ে নদীর দুই তীরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

নৌকাবাইচ উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন নদীর দুই পাড়ের বেউথা, চর বেউথা, আন্ধারমানিক, জয়নগর, বান্দুটিয়া, পশ্চিম বান্দুটিয়া, নয়াকান্দি ও কুশের চর গ্রামে আত্মীয়স্বজন বেড়াতে এসেছেন। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী, ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছেন তাঁরা।

প্রতিযোগিতায় মোট ২৯টি নৌকা অংশ নেয়। চারটি রাউন্ড শেষে চূড়ান্ত পর্বে পাবনার সাঁথিয়ার সালেক মেম্বারের নেতৃত্বাধীন শেরেবাংলা ভিটেপাড়া দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রায় শত বছরের এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা এক যুগ ধরে বন্ধ ছিল। এবার এই প্রতিযোগিতা ছিপা, পাংসি, ঘাসি, খেল্লাসহ অংশ নেয় মোট ২৯টি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় ৬০ থেকে ৮০ জন মাঝি একসঙ্গে বইঠা চালান। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রতিযোগিতা চলে। পরে বিজয়ী নৌকাসহ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি নৌকার দলনেতাকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রতিযোগিতা ঘিরে নদীর দুই তীরে মেলা বসেছিল। জেলা সদরের হাটিপাড়া গ্রাম থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা আবদুল কাদের (৭২) বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নৌকাবাইচ দেখে আসছি। আগে এ প্রতিযোগিতা ছিল গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব।’ নৌকাবাইচ দেখে উচ্ছ্বসিত মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানভীর হোসেনও।

এই প্রতিযোগিতা ছিপা, পাংসি, ঘাসি, খেল্লাসহ অংশ নেয় মোট ২৯টি নৌকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

নৌকাবাইচ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নৌকাবাইচের মতো বড় আর কোনো বিনোদন নেই। নৌকাবাইচ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। আমরা চাই আগামী প্রজন্মও এই আনন্দ উৎসব উপভোগ করুক।’

এই প্রতিযোগিতায় ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৯টি নৌকা অংশ নেয়। চারটি রাউন্ড শেষে চূড়ান্ত পর্বে পাবনার সাঁথিয়ার সালেক মেম্বারের নেতৃত্বাধীন শেরেবাংলা ভিটেপাড়া দল চ্যাম্পিয়ন হয়। সন্ধ্যায় বিজয়ী দলকে ট্রফি ও একটি মোটরসাইকেল পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি নৌকার দলনেতার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশ সুপার মোছা. ইয়াছমিন খাতুনসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন