[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ডাকসুতে প্রচার শুরু আজ, আচরণবিধিতে কড়াকড়ি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার থেকে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ থাকবে।

তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে আজ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ থাকবে। প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে মানতে হবে কড়া আচরণবিধি।

প্রচারের কৌশল নিয়ে গতকাল সোমবার বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রতিবেদক। মূলত চারটি উপায়ে নিজেদের কথাগুলো ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চান প্রার্থীরা। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টার বা লিফলেট, ব্যানার এবং সশরীর হল পর্যায়ে ও একাডেমিক ভবনের সামনে প্রচারণা চালাতে চান তাঁরা।

আজ সকালে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের বৈঠক রয়েছে। এরপর প্রচারণা শুরু করবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তাদের প্যানেলের এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে তাঁরা প্রচারণা শুরু করবেন।

একই সময়ে প্রচারণা শুরু করবে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদও। এই প্যানেলের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘যা করলে আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে না, সেভাবেই প্রচারণা চালাব।’

উদ্ভাবনী কোনো পদ্ধতিতে প্রচার শুরু করবেন বলে জানান স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি (সহসভাপতি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা।

সাতটি বাম ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে গঠিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, তাঁরা আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করবেন।

কী করা যাবে, কী করা যাবে না
কী কী উপায়ে ডাকসু ও হল সংসদের প্রার্থীরা প্রচার করতে পারবেন, তা উল্লেখ রয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিতে। সেই নিয়ম অনুযায়ী, ডাকসু ও হল সংসদের প্রার্থীরা সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপানো ও বিলি করতে পারবেন। সেখানে প্রার্থীদের সাদাকালো ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হল এলাকায় অবস্থিত যেকোনো স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছপালা, বিদ্যুৎ বা টেলিফোনের খুঁটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না। দেয়াল বা যানবাহনে কালি, চুন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে কোনো লিখন, মুদ্রণ, ছাপচিত্র বা চিত্রাঙ্কন করে প্রচার চালানো যাবে না।

কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ ফটক, তোরণ, ঘের নির্মাণ কিংবা ক্যাম্প ও আলোকসজ্জা করতে পারবেন না। তবে অস্থায়ী প্যান্ডেল, শামিয়ানা ও মঞ্চ স্থাপন করা যাবে। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না। শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ ও পরীক্ষার হলের মতো জায়গায় সভা-সমাবেশ বা নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।

প্রার্থীরা ভোটারদের কোনো ধরনের উপঢৌকন বা বকশিস দিতে পারবেন না। প্রচারে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া, গুজব ছড়ানো, কোনো তিক্ত বা উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী সভা–সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে চাইলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। প্রচারে বা ভোটের দিন কোনো পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না।

একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে একটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং করা যাবে। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো যাবে আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে। ভোটার ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।

কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা আইন অনুযায়ী যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

দুজনকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ
গতকাল ছিল ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২১ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের ওপর আপিল করেছিলেন ৩৪ জন প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে তাঁদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আপিল ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কমিটি গত রোববার একটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামী নামের দুই শিক্ষার্থীকে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের (ছাত্রলীগ) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে এই সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে জুলিয়াস সিজার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এক চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ন্যায়বিচারের অনুরোধ জানিয়েছেন।

ভোটার তালিকা প্রসঙ্গ
এত দিন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনলাইনে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট হল ও দপ্তরগুলোর জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত থাকবে।

যেসব ভোটার বা শিক্ষার্থী ভোটার তালিকায় ছবি প্রদর্শন করতে চান না, তাঁদের আগামীকাল বুধবারের মধ্যে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সভা
ছাত্র সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে ক্যাম্পাস ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের একটি বিশেষ সভা হয়েছে।

উপাচার্যের সভাকক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান। সভায় প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, সিটি এসবির ডিআইজি মীর আশরাফ আলী, ডিএমপির রমনা জোনের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম ও শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর উপস্থিত ছিলেন।

সভায় নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন