{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

উদ্বোধনের আগেই বাংলা একাডেমির লেখক ক্লাবে তালা, 'দখলের চেষ্টা'

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বাংলা একাডেমিতে ‘লেখক ক্লাব’ নামে একটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বাংলা একাডেমিতে ‘লেখক ক্লাব’ নামে একটি কক্ষ উদ্বোধনের আগেই আকবর আলী সিরাজি নামের একজন জীবনসদস্য তা ‘দখল করার চেষ্টা করেছেন’ বলে অভিযোগ উঠেছে।

তিনি কয়েকজনকে নিয়ে এসে কক্ষটিতে ‘নিজস্ব তালা’ লাগিয়ে বাংলা একাডেমির নিরাপত্তাকর্মীর কাছে একটি চাবি দিয়ে গেছেন।

দখল চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে আলী সিরাজি বলেছেন, তিনি তালা দিতে বললেও নিজে তালা দেননি; একাডেমির নিরাপত্তাকর্মীরাই তালা দিয়েছেন।

তবে একাডেমির কর্মীরা বলছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভাষা প্রশিক্ষণ উপবিভাগ এবং নির্মাণাধীন বাংলা একাডেমি লেখক কেন্দ্রের মূলফটকে নিজস্ব তালা লাগিয়ে দেয় সিরাজীর লোকজন।

এই ঘটনার পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আকবর সিরাজীকে চিঠি দিয়ে ৫ দিনের মধ্যে তার বক্তব্য জানতে চেয়েছে।

তবে সিরাজী বলছেন, বাংলা একাডেমির এ ধরনের কোনো চিঠি তিনি ‘পাননি’।

 ওই চিঠির একটি কপি প্রতিবেদক দেখেছে। তাতে বলা হয়েছে, 'জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমির আপনি একজন সম্মানিত জীবনসদস্য। একাডেমির জীবনসদস্য হিসেবে একাডেমির ভাবমূর্তি রক্ষায় আপনার দায়িত্ব রয়েছে বলে একাডেমি মনে করে। কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে একাডেমি কর্তৃপক্ষ বারবার বিব্রত হচ্ছে। ইতিপূর্বেও, বিশেষ করে ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আপনি দলবলসহ একাডেমিতে এসে একাডেমির নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। একাডেমির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন। আপনার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলা একাডেমির স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে।' 

এ সকল কর্মকাণ্ড একাডেমির স্বার্থ ও আদর্শের পরিপন্থি, বিষয়টি বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করা হবে বলেও চিঠিতে সতর্ক করা হয়। 

বাংলা একাডেমির সচিব মো. সেলিম রেজা বলেন, 'আকবর সিরাজী গতকাল কিছু লোককে নিয়ে এসে নির্মাণাধীন লেখক কেন্দ্রের সামনের ফটকে তালা দিয়ে দিয়েছেন। এতে ওই লেখক কেন্দ্রের পাশে যে একাডেমির অফিস আছে আছে, সেগুলোও তালাবন্ধ হয়ে যায়। আর লেখক ক্লাব তো এখনো উদ্বোধন হয়নি। কিছু ফার্ণিচার কেনা হয়েছে, সেগুলো এখনো সেট করা হয়নি। অথচ তিনি নিজে নিজেই সেগুলো কয়েক জায়গায় সেট করে আমাদের নিরাপত্তাকর্মীকে বলেছেন, এখন থেকে তারা এখানে নিয়মিত বসবেন। এটা নাকি তাদের সংগঠনের অফিস হিসেবে ব্যবহার করবেন।' 

সেলিম রেজা বলেন, 'আমরা তাকে ফোন করে জানতে চেয়েছি, এরপর লিখিত চিঠি দিয়েও ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী তো এটা তিনি করতে পারেন না। আমরা সেই তালা খুলে আমাদের তালা লাগিয়েছি।' 

আকবর সিরাজী জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই নানান ‘তদবির’ নিয়ে আসেন বলে সেলিম রেজার ভাষ্য। 

তিনি বলেন, 'গত বইমেলার সময় তিনি আমাদের কাছে এসে হুট করেই বলছেন, তাকে একটা বসার জায়গা দিতে হবে। তারা নাকি ২০-৩০ জন এখানে নিয়মিত বসবেন। এছাড়া তিনি বিভিন্নজনকে জীবনসদস্য করে দেবার তদবির নিয়েও আসেন।' 

একাডেমির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আকবর সিরাজী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বেশ কয়েকবার একাডেমিতে 'মব' তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। ধমকাধমকি করে ‘বিভিন্ন বেআইনি’ সুবিধা পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন। বাংলা একাডেমিতে তিনি নিজেকে একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও তিনি সেই দলের কোনো পদে নেই।   এর মধ্যে একাডেমির শামসুর রাহমান মিলনায়তনে তার লোকদের নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন, কিন্তু মিলনায়তনের ভাড়া পরিশোধ করেননি।

আরও জানা গেছে, একাডেমির লোগো ব্যবহার করে একটি সংগঠনও তৈরি করেছেন সিরাজী; যা বাংলা একাডেমির বিধিসম্মত নয়। সেই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তিনি বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন ‘সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার’ কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ‘সুবিধা নেন’ বলেও অভিযোগ আছে। এ নিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ‍্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো লেখক না হয়েও আকবর সিরাজী কীভাবে বাংলা একাডেমির জীবন সদস্য হয়েছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, 'বাংলা একাডেমির লেখক কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে আকবর সিরাজী 'নিজস্ব তালা' দিয়ে আমাদের নিরাপত্তাকর্মীর কাছে চাবি দিয়ে যান। এটা তিনি কেন করেছেন, তা জানতে চেয়ে আমরা তাকে চিঠি দিয়েছি। সরকারি অফিসের কক্ষে এভাবে তালা দেয়ার ঘটনায় থানায় কোনো জিডি করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “আমরা এ নিয়ে এখনো থানায় কোনো জিডি করিনি।' 

অধ্যাপক আজম বলেন, 'বাংলা একাডেমিতে লেখক ক্লাব করা হচ্ছে। তবে সেটি এখনো উদ্বোধন করা হয়নি। লেখক ক্লাব কীভাবে পরিচালিত হবে, তার নিয়ম বা বিধিও তৈরি হয়নি।' 

 অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর সিরাজী বলেছেন, 'আমি তালা দেই নাই। আমি তালা দেব কেন? তালা দিয়ে থাকলে বাংলা একাডেমির কেয়ারটেকারই তালা দিছে। আমরা বলছি, এটা খোলা থাকে। এখানে বহিরাগতরা আইসা বইস্যা থাকে। সিগারেট খায়, কেউ কেউ গাঁজাও খায়। এজন্য তালা দিয়া রাইখেন। বলার পরে হয়ত তারা এই ব্যবস্থাটা করছে।' 

একাডেমির নারী কর্মীদের সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ কেন করব? তারা তো আমাদের পরিবারের সদস্য। কেউ ছোট বোন, কেউ বড় বোন। কেউ মেয়ে সমতুল্য। এটা হয়? কেউ এরকম আচরণ করবে?' 

প্রতিবেদকের প্রশ্নে সিরাজী দাবি করেন, 'তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি স্বীকার করেন, নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দিলেও তার কোনো বই প্রকাশিত হয়নি।' 

আকবর সিরাজী বলেন, 'ছাত্রজীবনে রাজনীতি করতাম, এখন করি না। এখন লেখালেখিই করি। কলাম লিখি। আমার তো শত শত, হাজারো কলাম ছাপা হইছে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়।' 

সিরাজী বলছেন, 'তিনি ‘দৈনিক দেশ জগৎ’ নামে একটি পত্রিকার সঙ্গেও যুক্ত আছেন। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লেখেন।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন