নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

‘বাংলাদেশ গণ–অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগাষ্ঠী | ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

গণ–অভ্যুত্থান শেষে দেশের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, ভিন্নমতের মানুষ, জাতীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধকেও পদদলিত করার অপচেষ্টা সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। আন্দোলন শেষে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বলয় সম্প্রসারিত হচ্ছে। তারা জাতীয় সংগীত ও সংবিধানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের মানুষ ভয়াবহ বিপদের মুখে রয়েছে।

শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগাষ্ঠী আয়োজিত ‘বাংলাদেশ গণ–অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সেমিনারটি হয়।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি বলেন,  ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে পাবলিক মব তৈরি করে প্রকাশ্যে মাজার ভাঙা হচ্ছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।’

অমিত রঞ্জন দে আরও বলেন, ‘আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী, অংশগ্রহণকারী ও আন্দোলনের সুবিধাভোগীদের মধ্যে নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ছিল এবং এখনো আছে। এই আন্দোলনে প্রগতিশীল শক্তি যেমন ছিল তেমনি সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ ও সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবও ছিল। আন্দোলন শেষে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ এবং সাম্রাজ্যবাদের প্রভাব বলয় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে অসহিষ্ণু বা নিপীড়ক একেকটা পক্ষ আবির্ভূত হচ্ছে। তারাও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ন্যায় মানুষের মতপ্রকাশে বাধা তৈরি করছে, সহিংসতা সৃষ্টি করছে, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এদের দাপটে এবং দেশের ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, নাজুক প্রশাসনিক অবস্থার সুযোগে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও গণতন্ত্র পরিপন্থী শক্তির উল্লম্ফন ঘটেছে।’

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে লিখিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত সে অভ্যুত্থানে পতন হয়েছে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী শাসনের। কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি সংগঠন এবং প্রশাসনের দমন-পীড়নের কারণে এক পর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। যার পটভূমি আওয়ামী সরকার নিজেই তৈরি করে রেখেছিল।’

এ ছাড়া সেমিনারে উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে আলোচনা করা হয়।

উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সহসাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষের সঞ্চালনায় ছায়ানটের সভাপতি সারওয়ার আলী, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ, ৯০-এর গণ–অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা আসলাম খান, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সালমান রাহাত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন সেমিনারে বিভিন্ন পর্যায়ে বক্তব্য দেন।