নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আজ সোমবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

তথ্য এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিশন গঠন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের তালিকায় কেন প্রাধান্য পায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘একধরনের বিশ্ব রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে যে এক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো সেটি (তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন) গঠিত হয়নি।এসব আইন সংস্কার দূরে থাকুক, এ দুটি কমিশন এখন পর্যন্ত নেই।’ এ দুটি কমিশন গঠনে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

নাগরিক সমাজের অধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলোতে যে ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করতে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এই আইন বাস্তবায়নে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনে বেশ কিছু দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র রয়ে গেছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ নম্বর ধারা বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটানো হলেও কর্তৃত্ববাদী চর্চার পতন চাওয়া হচ্ছে না। এর দৃষ্টান্ত হলো, এ ধরনের আইনে সংস্কার আনতে সরকারের ব্যর্থতা।

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক যাত্রা অশুভ ছিল। ওই দিন বিকেল থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা, বাণিজ্য শুরু করে। গত এক বছর ধরে তা আরও বেড়েছে। এমনকি দলের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিয়েও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের জন্মলগ্ন থেকে একই রোল মডেল অনুসরণ করেছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কারের কথা নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয় না বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।

গবেষণা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য সত্ত্বেও যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত। ফলে সংস্কারের আশায় ধাক্কা লাগতে পারে, রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান ও উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের। সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।