প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

 বৃক্ষমেলা থেকে গাছের চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দুই  তরুণ-তরুণী। গত মঙ্গলবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

১৩ বছর বয়সী একটি গাছ। তাতে থোকায় থোকায় ধরেছে বাদামি খোসার গোলাকৃতির লংগান। এটাকে গোল লিচু বা কাঠলিচুও বলা হয়। লিচুর সঙ্গে আকারের পার্থক্য থাকলেও স্বাদে মিল রয়েছে। লংগানের পাশে রয়েছে হরীতকী, আমলকী, বহেরা, মাল্টা, কমলার মতো দেশি ফলও। আবার মেক্সিকোর নানা প্রজাতির ক্যাকটাস কিংবা মাটি ছাড়া বাতাসে বেড়ে ওঠা শোভাবর্ধনকারী এয়ার প্ল্যান্ট ।

এমন নানা জাতের গাছ দেখা গেল চট্টগ্রাম নগরের লালদিঘি মাঠের বৃক্ষমেলায়। লালদিঘি মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। ফুল, ফলসহ নানা প্রজাতির বনজ গাছের চারা শোভা পাচ্ছে এই মেলায়। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উদ্যোগে গত সোমবার থেকে এই বৃক্ষমেলা শুরু হয়। মেলায় ২ হাজার ৬৫ প্রজাতির ফলদ, বনজ, ওষধি ও শোভাবর্ধনকারী চারা এবং ২১০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ক্যাকটাস প্রদর্শিত হচ্ছে।

মেলায় ঢুকতেই বাঁ দিকে একটি দোকানে সারি সারি ক্যাকটাস সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রিন বি নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই ক্যাকটাস এনেছে। মোট ১২০টি প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে এখানে। মেক্সিকোর গোল্ডেন ব্যারেল, ম্যামেলারিয়া হান্নিয়ানাসহ ছোট-বড় নানা আকৃতির ক্যাকটাস। সবুজ, লালচে ইত্যাদি রঙের ক্যাকটাস রয়েছে এখানে। দাম ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্য পাশে সাজানো রয়েছে বনসাই এবং এয়ার প্ল্যান্ট।
গ্রিন বির কর্ণধার অর্ক আকিব জানান, তাঁরা মূলত অনলাইনে ক্যাকটাস, এয়ার প্ল্যান্ট বিক্রি করে থাকেন। বিভিন্ন দেশ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব সংগ্রহ করে থাকেন। মেলায় এসে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন অর্ক আকিব।

পেশায় প্রকৌশলী তরুণ আকিব অক্সিজেন এলাকায় নিজ বাসার বারান্দা ও ছাদে এসব ক্যাকটাস, বনসাই, শোভাবর্ধনকারী এয়ার প্ল্যান্ট মজুত করে থাকেন। সেখান থেকেই অনলাইনে বিক্রি করেন। আকিব বলেন, শখের বশে ছয় বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। এটা এখন নেশার মতো তাঁর কাছে।

এখানে রয়েছে ইয়েমেনের এরাবিকাম হালক নামে একটি বনসাই। ওটাতে ফুল ফোটে। এই বনসাইটির দাম দেওয়া হয়েছে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া সাধারণ বনসাই ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এয়ার প্ল্যান্ট, হাউস প্ল্যান্ট ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়।

মেলায় আনা হয়েছে হরেক প্রজাতির গাছ। গত মঙ্গলবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

চিটাগং নার্সারিতে লংগান ফলের ছোট থেকে মাঝারি আকারের গাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিন বছর বয়সী মাঝারি গাছে ফলও ধরেছে। এখানে বিদেশি কমলা, লেবু ও মাল্টা রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের প্রজাতি এগুলো। এ ছাড়া শরিফা, আতা, হরীতকী, আমলকী, বহেরা ইত্যাদিও মিলছে। আকারভেদে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব ফলের গাছ।

এখানে রয়েছে ইয়েমেনের এরাবিকাম হালক নামে একটি বনসাই। ওটাতে ফুল ফোটে। এই বনসাইটির দাম দেওয়া হয়েছে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া সাধারণ বনসাই ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এয়ার প্ল্যান্ট, হাউস প্ল্যান্ট ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়।

চিটাগং নার্সারির মালিক মো. রাসেল বলেন, ফুল ও ফলের প্রচুর দেশি-বিদেশি প্রজাতি নিয়ে তিনি মেলায় আসেন। কিছু চারা কলম করে আবার কিছু বীজ থেকে করা হয় বলে তিনি জানান।

লংগানসহ আরও কিছু বিদেশি ফলের গাছ দেখা গেছে কসমো নার্সারিতেও। এর পাশে সবুজ মেলা নার্সারিতেও ক্যাকটাস, বনসাই, মানিপ্ল্যান্টসহ শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন গাছ ও লতাগুল্ম রয়েছে।

বাহদুর নার্সারি, বাংলাদেশ নার্সারি ও ফতেয়াবাদ নার্সারিতে ফুল-ফলের পাশাপাশি বনজ গাছও রয়েছে। ৫০ টাকা থেকে শুরু এসব চারা গাছের দাম। ফুলের মধ্যে কামিনী, শিউলি, গন্ধরাজ, গাঁদা, সূর্যমুখী ছাড়াও বিদেশি নানা প্রজাতি রয়েছে।  মেলা দেখতে ফিরিঙ্গিবাজার থেকে আসেন কলেজছাত্র দীপ্ত দে। তিনি বেশ কিছু ফল ও ফুলের গাছ কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘বাসার ছাদে বাগান করি আমরা। তাই নিয়ে যাচ্ছি।’

উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম কায়চার বলেন, ‘বন বিভাগ এই মেলার মাধ্যমে মানুষকে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করে আসছে প্রতিবছর। এবারও মেলায় মানুষের বিপুল সমাগম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’