নির্বাচনকালীন কর্মকর্তাদের সুবিধার জন্য সরকার কিনছে ২৮০টি গাড়ি
![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
চলতি অর্থবছরে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি থাকলেও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব নেওয়া মন্ত্রিসভা সদস্যদের জন্য ২৮০টি নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিতে জানিয়েছে, এসব গাড়ি কিনতে মোট ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর জন্য ৬০টি গাড়ি কেনা হবে। এসব গাড়ি হবে মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স মডেলের, যার একটির দাম ধরা হয়েছে ১.৬৯ কোটি টাকা।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য ১৯৫টি নতুন স্পোর্টস ইউটিলিটি গাড়ি এবং জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের অফিসের জন্য ২৫টি মাইক্রোবাস কেনার প্রস্তাব রয়েছে। উপজেলা কর্মকর্তাদের গাড়ি মিতসুবিশি হলেও মন্ত্রিপরিষদের গাড়ির মডেল থেকে ভিন্ন হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠিতে উল্লেখ করেছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে এই কর্মকর্তারা মুখ্য ভূমিকা রাখবেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা বা সমমর্যাদার ব্যক্তিদের জন্য সরকারি গাড়ি পুলে পর্যাপ্ত মানের গাড়ি বর্তমানে নেই। বর্তমানে ব্যবহার করা গাড়িগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা, যার আয়ুষ্কাল ইতোমধ্যেই ৯ বছরের বেশি, মেরামত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।'
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিদ্যমান গাড়ি ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের এলাকা সফর, উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনসহ জরুরি কাজ করা কষ্টসাধ্য হবে।
গত ৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। ফলে নতুন সরকারও ওই মাসেই গঠিত হবে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন লাগবে। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় গাড়ি কিনবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।
অল্প খরচ নীতি ৮ জুলাই জারি করা একটি পরিপত্রে সরকারি উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় সব ধরনের গাড়ি কেনা নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে মে মাসে উপদেষ্টা বা মন্ত্রিসভা সদস্যদের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল, তবে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি তা অনুমোদন দেয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের জন্য গাড়ি সরবরাহ করে থাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে উপদেষ্টা ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরাও পুরনো গাড়ি ব্যবহার করছেন। সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা গাড়ি কতদিন ব্যবহার করবেন তা নির্দিষ্ট কোনো আইন বা বিধানে নেই। ১৯৮০-এর দশকে জারি এক প্রজ্ঞাপনে ১০ বছরে একবার গাড়ি প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছিল।
২০১৬ সালের পর নতুন কোনো গাড়ি কেনা হয়নি। তাই সর্বশেষ কেনা গাড়ির বয়সও প্রায় ৯ বছর।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং ভিআইপি ও বিদেশি অতিথিদের জন্য ২০টি মার্সিডিস গাড়ি কেনার প্রস্তাব ছিল। এছাড়া মন্ত্রিসভা সদস্যদের জন্য ৫০টি হাইব্রিড গাড়ি কেনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। তবে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এর আগে, ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ৪৫তম সম্মেলনের জন্য ৩০টি মার্সিডিস ও বিএমডব্লিউ গাড়ি কেনা হয়। সম্মেলনের পর কয়েকটি গাড়ি তৎকালীন মন্ত্রিসভা সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়, বাকিগুলো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরকারি গাড়ি পুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন