জুলাই শহীদ-আহত তালিকা যাচাই করছে সরকার
শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় কিছু নাম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে![]() |
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় | ছবি: সংগৃহীত |
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা আবার যাচাই–বাছাই করছে সরকার। গেজেটে প্রশ্নবিদ্ধ নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ইতিমধ্যে দেশের সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় কিছু নাম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনে যুক্ত না থেকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—এমন ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে নতুন গেজেট প্রকাশ করা হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হিসেবে ৮৩৪ জনের নামে চলতি বছরের জানুয়ারিতে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। তালিকায় আরও ১০ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩০ জুন গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে সরকারি গেজেট অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৪৪ জন।
তবে ৩ আগস্ট শহীদদের তালিকা থেকে আটজনের নাম বাদ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে চারজনের নাম গেজেটে দুবার এসেছিল। বাকি চারজন সরাসরি জুলাই গণ-আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আটজনের নাম বাদ দেওয়ার পর এখন শহীদের সংখ্যা ৮৩৬ জন।
গত ২২ জুন সব ডিসিকে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, গেজেটে অন্তর্ভুক্ত শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। আহতদের দেওয়া হচ্ছে আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা। কিন্তু আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও অনেকের নাম তালিকায় এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য তালিকা আবার যাচাই করে প্রকৃত শহীদ ও আহতদের নাম নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের প্রথম তালিকায় নাম ছিল ১২ হাজার ৪৩ জনের। গত জুলাইয়ে আরও ১ হাজার ৭৫৭ জনের নাম যুক্ত করা হয়। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, আহত ব্যক্তিদের মোট সংখ্যা এখন ১৩ হাজার ৮০০।
তবে অভিযোগ উঠেছে, জুলাই গণ-আন্দোলনে অংশ না নিলেও কারও কারও নাম তালিকায় ঢুকে পড়েছে।
ডিসিদের চিঠি
গত ২২ জুন সব ডিসিকে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, গেজেটে অন্তর্ভুক্ত শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা। কিন্তু আন্দোলনে সম্পৃক্ত না থেকেও অনেকের নাম তালিকায় এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য তালিকা আবার যাচাই করে প্রকৃত শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের নাম নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
যশোরে হোটেলে ২৪ জনের মৃত্যু কীভাবে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সেদিন বিকেলে যশোর শহরের হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন দেওয়া হয়। আগুনের এই ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। হোটেলটির মালিক যশোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
এই আগুনের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের নাম শহীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে এ নিয়ে বিতর্ক আছে।
এ কারণে গত জুনে যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজাহারুল ইসলামকে আলাদা করে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘২৪ জনের মৃত্যু নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ বলছেন, তাঁরা আন্দোলনে ছিলেন। কেউ বলছেন, তাঁরা আন্দোলনে ছিলেন না। বিতর্ক এড়াতে সব পক্ষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁদের শহীদের তালিকায় রাখা হবে। নইলে বাদ দেওয়া হবে।’
আর্থিক সুবিধা
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিটি শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে।
তবে যশোরে নিহত ২৪ জনের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র দেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাঁদের পরিবারকে জেলা পরিষদ থেকে ইতিমধ্যে দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোরের ডিসি।
এর বাইরেও সরকারের তৈরি আহত ব্যক্তিদের তালিকায় ভুয়া নাম থাকার অভিযোগ আছে। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ভুয়া আহত ব্যক্তিদের তালিকা আরও লম্বা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রতারণার মাধ্যমে এসব ভুয়া নাম তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সব জেলা থেকে তথ্য এলে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। সরকার আশা করছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিতর্ক দূর হবে। প্রকৃত শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা যাবে।
জুলাই আহতদের নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড অপারেশন অ্যাডভাইজার মোহাম্মদ রাকিনুল হাকিম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, আহতদের তালিকায় ভুয়া নাম ঢুকেছে। সরকারের যাচাই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে তালিকা স্বচ্ছ না হলে ভবিষ্যতেও প্রশ্ন থেকে যাবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন