[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

একটি মাল্টা কিনতেই ১০০ টাকা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

চট্টগ্রাম নগরের জামালখানের একটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাল্টা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

ফলের দোকানে থরে থরে সাজানো মাল্টা। মাঝারি আকারের একটি মাল্টা ওজন মেশিনে রাখার পর দেখা গেল ওজন ২৩০ গ্রাম। বিক্রেতা ৪৪০ টাকা কেজি দরে ওজন মেশিনে তথ্য দিলেন। মুহূর্তেই ওজন মেশিনের ছোট পর্দায় ভেসে উঠল ১০০ টাকা। বড়টি সরিয়ে আরেকটু ছোট আকারের মাল্টার ওজন মেশিনে দিতেই দাম উঠল ৮৮ টাকা।

হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। একটি মাল্টার দাম এখন ১০০ টাকাই। সপ্তাহ দুয়েক আগেও এই একটি মাল্টার দাম পড়ত ৫৮ টাকা। কারণ, তখন প্রতি কেজির দাম ছিল ২৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দাম।

মাল্টার দাম কেন এভাবে বেড়ে গেল, তা জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যভান্ডার বিশ্লেষণ করেছে প্রতিবেদক। তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে প্রতি মাসে গড়ে মাল্টা আমদানি হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ কেজি করে। তবে জুলাই মাসে মাল্টা আমদানি হয় ২৭ লাখ ৫৭ হাজার কেজি। অর্থাৎ স্বাভাবিক গড় চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে ভাষ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় মাল্টার চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা যখন খুবই বাড়তি, সে সময় মাল্টা আমদানি হয়েছে কম। তাতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ও চিকিৎসক সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, সাধারণত চিকিৎসকেরা এ ধরনের রোগীদের পুষ্টিকর ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। বিশেষ করে লেবুজাতীয় ফল খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে আমাদের এখানে যেকোনো রোগের প্রকোপ হলে রোগীর পথ্য হিসেবে মাল্টা-কমলাজাতীয় ফল খাওয়ার ঝোঁক বেড়ে যায়।

ঢাকার বাদামতলী ফল মার্কেটের ‘ফলবাজার’ নামে পাইকারি ফল বিক্রির প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ফেসবুক পেজে ফলের পাইকারি দরদামের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। সেখানে ২৪ জুলাই এক পোস্টে মাল্টার পাইকারি মূল্য দেওয়া হয় ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা (সাড়ে ১৫ থেকে ১৬ কেজির কার্টন)। প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৫১ থেকে ২৮০ টাকা। গত কয়েক মাসে এই কাছাকাছির দরই দেখাচ্ছিল তাদের পোস্টে। ১০ দিনের ব্যবধানে রোববার আরেক হালনাগাদ পোস্টে দেখানো হয়, প্রতি কার্টন মাল্টার দাম ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অবশ্য আমদানিকারকেরা বলছেন, রোববার চট্টগ্রামের বাজারে ১৫ কেজির প্রতি কার্টন মাল্টা সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় মাল্টার চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা যখন খুবই বাড়তি, সে সময় মাল্টা আমদানি হয়েছে কম। তাতে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

খুচরা বাজার ঘুরে আসা যাক। ১০ দিন আগে চট্টগ্রামের ফলের দোকানগুলোতে ১ কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহের মধ্যে তা ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের হালিশহরে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছিল ৪৪০ টাকায়। আবার চট্টগ্রামের সুপারশপে এই মাল্টা প্রতি কেজি ৪৮৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিদেশি ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মাল্টা। গত বছর এই ফল আমদানি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ কেজি। বাংলাদেশে মাল্টা আমদানি হয় সাত দেশ থেকে। তবে বড় অংশই আসে মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে। গত বছর এই তিন দেশ থেকে মোট আমদানির ৮২ শতাংশ এসেছে। এ ছাড়া চীন, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও আমদানি হয়।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন মৌসুমের মাল্টা বাজারজাত হওয়ার আগেই ঘাটতি শুরু হয়। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মাল্টা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে সংকট আর থাকবে না। দামও কমে যাবে।

— মোহাম্মদ কামাল, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ফল আমদানিকারক সমিতি

এই মাল্টা আমদানিতে কত খরচ, তা দেখা যাক। গত মাসে গড়ে প্রতি কেজি মাল্টা আমদানি হয়েছে ৭০ সেন্ট বা ৮৬ টাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি হওয়া মাল্টায় কেজিপ্রতি শুল্ক–কর দিতে হয় প্রায় ১০৬ টাকা। শুল্ক–কর, দামসহ পড়ছে ১৯২ টাকা। এই হিসাব নথিপত্রের। এর বাইরে পরিবহন ও সংরক্ষণ খরচ আছে। পণ্য খালাসের এজেন্টের বিল আছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ ২০০ টাকা হওয়ার কথা। এর মানে হলো, আমদানি খরচের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাল্টা।

তবে নথিপত্রের এই খরচের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে জানিয়ে একজন আমদানিকারক বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি হওয়া প্রতি কেজি মাল্টায় সর্বোচ্চ ২৫১ টাকা খরচ পড়ে। আমদানিকারকের খরচ হিসাব ধরে শুরুতে ফেরা যাক। প্রতি ২৩০ গ্রাম ওজনের একটি মাল্টার খরচ পড়ে ৫৮ টাকা। খুচরায় যা আপনাকে ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

গত অর্থবছর ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠান মাল্টা আমদানি করেছে। জুলাই মাসে ৩০ জন ব্যবসায়ী মাল্টা আমদানি করেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে মাল্টার বড় উৎস মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকা। মিসরে মাল্টার মৌসুম শেষ হয় মে মাসে। দক্ষিণ আফ্রিকার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে। প্রতিবছর মিসরের মৌসুম শেষ হওয়ার আগে বিপুল পরিমাণ মাল্টা আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাল্টা আমদানি শুরুর আগে যাতে এক মাস চাহিদা মেটানো যায়, সে জন্যই এ সময় আমদানি বাড়ে। তবে গত বছর মাল্টা আমদানি করে লোকসান গুনেছেন অনেক আমদানিকারক। দেশি ফল আমের মৌসুমে বিদেশি ফলের বিক্রি কমায় দামও পড়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, গতবারের লোকসানের কারণে এবার অনেকেই বাড়তি আমদানি করেননি। আবার গত বাজেটে মাল্টার শুল্ক আরও বাড়বে কি না, এমন শঙ্কাও ছিল। তাতে এবার মে মাসে মিসরের মৌসুম শেষে আমদানি হয়েছে কম। সাধারণত মিসর-দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানিতে এক মাস সময় লাগে। এই এক মাস পর অর্থাৎ জুলাই মাসে এবার স্বাভাবিক আমদানির মাত্র ২০ শতাংশ মাল্টা এসেছে। এই ঘাটতির কারণে বাজারে দাম বেড়ে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফল আমদানিকারক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ কামাল বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন মৌসুমের মাল্টা বাজারজাত হওয়ার আগেই ঘাটতি শুরু হয়। তবে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বিপুল পরিমাণ মাল্টা চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। ফলে সংকট আর থাকবে না। দামও কমে যাবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন