গণ–অভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠানে না রাখায় শাবিপ্রবিতে ছাত্রদলের তোপের মুখে উপাচার্য
![]() |
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের তোপের মুখে উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। সোমবার দুপুর দেড়টায় ক্যাম্পাসে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জুনতলায় এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা বলে জানা যায়, আজ বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আলোচনার সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আলোচনা সভা শেষ হয় বেলা দেড়টার কিছু সময় আগে। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন উপাচার্য। উপাচার্যের গাড়িটি একাডেমিক ভবন ‘এ’ পার হয়ে অর্জুনতলায় আসলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকারের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন নেতা–কর্মী উপাচার্যের পথরোধ করেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘জুলাইয়ের গাদ্দারেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ভুয়া ভুয়া, প্রশাসন ভুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে গাড়ির জানালা খুলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য।
এসময় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপাচার্যের কছে অভিযোগ করেন, তাঁর মদদে গত একবছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ সময় উপাচার্য তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে প্রক্টর এসে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তিনিও তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা পথ ছেড়ে দিয়ে মিছিল নিয়ে গোলচত্বরের দিকে চলে যান। এর আগে আলোচনা সভাও বয়কট করে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকারের অভিযোগ, ৫ আগস্ট উপলক্ষে অনেক আয়োজন করেছে প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনে তো সবার ভূমিকা রয়েছে। নাঈম সরকার বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, আমাদের তো লোকবল সংকট। লোকবল সংকট থাকতে পারে। কিন্তু ওনারা তো সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দলমত–নির্বিশেষে সবাইকে নিবেন, যাঁরা জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। তাঁদের সবাইকে নিয়ে তো আয়োজনটি সম্পন্ন করতে পারত। আমরা এমন আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। অতিদ্রুত আমরা ভিসি স্যারের কাছ থেকে এর কারণ জানতে চাই। যে পর্যন্ত কারণ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্রদল গোলচত্বর থেকে নড়বে না।’
ছাত্রদলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আলোচনা সভার আয়োজক কমিটি হয়তো কিছু ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। এ জন্য ছাত্রদলের সংশ্লিষ্টরা হয়তো রাগ করেছে। কমিটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি জানা যাবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই অভ্যুত্থান দিবসের আয়োজক কমিটির সদস্য ও আলোচনা সভার সভাপতি মো. এছাক মিয়া বলেন, অনুষ্ঠানে দলীয় ব্যানারে কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। যাঁরা অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদেরকে সেভাবে ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। কাউকেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির স্থগিত কমিটির আহ্বায়ক পলাশ বখতিয়ার বলেন, ‘আন্দোলনে সক্রিয় একজনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠনের কমিটির কেউ না। এখন যে অভিযোগ করা হচ্ছে যে সুযোগ–সুবিধা বা ফান্ডিং দেওয়া হচ্ছে, তা ঠিক নয়।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন