নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
আদালত প্রাঙ্গণে জানে আলম অপু | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকার গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপুকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচয়ে এই কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান অপুকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. শাহ আলম জামিন চেয়ে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, অপু একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য। তারা ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রমাণ রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে অপুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের অন্য সদস্য ও গডফাদারদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ওয়ারী এলাকা থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। এর আগে ওই ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রাপ্তবয়স্ক চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
চাঁদাবাজির অভিযোগে সংগঠনটি এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কৃত নেতা আবদুর রাজ্জাক রিয়াদের পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে সোয়া দুই কোটি টাকার চারটি চেক উদ্ধার করেছে পুলিশ। ‘ট্রেড জোন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া এই চেকগুলো প্রাপকের নাম ও তারিখবিহীন। এর মধ্যে দুটি এক কোটি, একটি ১০ লাখ ও আরেকটি ১৫ লাখ টাকার।
এছাড়া রিয়াদের বাড্ডার ভাড়া বাসা থেকে আরও প্রায় তিন লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, যা শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে নেওয়া চাঁদার অংশ বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, 'রিমান্ডে রিয়াদ স্বীকার করেছেন চাঁদার ১০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ পেয়েছেন তিনি, বাকি টাকা নিয়েছেন অপুসহ অন্যরা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রিয়াদ ও অপু মিলে একটি চক্র গড়ে তোলে, যারা জমি দখল ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করত।'
এ ঘটনায় ২৬ জুলাই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ১৭ জুলাই সকালে রিয়াদ ও অপু বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা না দিলে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে তিনি নিজের ও ভাইয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দেন।
পরবর্তীতে ১৯ জুলাই ও ২৬ জুলাই আবারও আসামিরা বাসায় গিয়ে হুমকি দেন এবং বাকি টাকা দাবি করেন। শেষবার পুলিশ গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে ধরে ফেললেও অপু পালিয়ে যান। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।