{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হচ্ছে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের আর্থিক খাত বড় ধরনের অস্থিরতার মুখে পড়েছে। দেশের ৩৫টি ব্যাংকের বাইরে থাকা অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া ঘোষণা ও সম্পদ বিক্রি করে কার্যক্রম বন্ধের পথে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা প্রথমবার ঘটছে। এ পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো আমানতকারীদের অর্থ রক্ষা করা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৭৩.৫ শতাংশই ১২টি প্রতিষ্ঠানের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘সতর্কতা তালিকায়’ রাখা হয়েছিল। জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও ৯টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তাই তাদের দেউলিয়া প্রক্রিয়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি খাতের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শুধুমাত্র সংকটাপন্ন প্রতিষ্ঠানের পতন নয়, বরং এর মাধ্যমে পুরো খাত পুনর্গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খাতের খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি বহন করছে এই ৯টি প্রতিষ্ঠান।

প্রাথমিকভাবে দেউলিয়া প্রক্রিয়ার আওতায় চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— ফাস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং, ফেয়ারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, অ্যাভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি ঋণ ও আর্থিক অনিয়মের কারণে সংকটে ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে খাতের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, যার অর্ধেকের বেশি ৯টি প্রতিষ্ঠান বহন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সরকার নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে। আমরা এই পদক্ষেপ নিচ্ছি কেবল আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। তাদের অর্থ ফেরত দেওয়াই হবে প্রথম অগ্রাধিকার।” তিনি আরও জানান, আগামী মাস থেকেই দেউলিয়া প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এ জন্য ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী হাইকোর্টে আবেদন করা হবে। আদালতের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক বা একাধিক দেউলিয়া তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হবে।

গভর্নর বলেন, সব প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিল না।

৯টির বাইরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৭৩.৫ শতাংশ ১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেন্দ্রীভূত। জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০টি প্রতিষ্ঠানকে ‘সতর্কতা তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করে। তাদের কাছে লাইসেন্স বাতিল না করার যৌক্তিকতা চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটালসহ আরও কয়েকটি।

চিহ্নিত অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়া চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠান স্বাধীন পরিচালকের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও কার্যত কোনও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অচল অবস্থায় রয়েছে।


অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ খাতের জন্য ঝুঁকি ও সুযোগ একসাথে তৈরি করবে। একদিকে একসাথে এতগুলো প্রতিষ্ঠানের পতন খাতের প্রতি জনআস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে। অন্যদিকে, দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে দিলে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক নিয়ন্ত্রকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ মূলত একটি ‘পরিষ্কার-সফাই প্রক্রিয়া’। তবে আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত পাবেন কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেউলিয়া প্রক্রিয়ায় প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হবে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে। তবে তা কতটা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করছে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশিষ্ট সম্পদ ও আইনি প্রক্রিয়ার ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে আদালতের মাধ্যমে এবং এক বা একাধিক দেউলিয়া তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করা হবে।

গভর্নর ড. আহসান মনসুর বলেন, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়াই প্রধান লক্ষ্য। প্রয়োজনে আরও প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হতে পারে। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন