{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ১৮ জেলেকে ধরে নিলো আরাকান আর্মি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নাফ নদী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

কক্সবাজারের টেকনাফের উপকূল থেকে মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার ব্যবধানে তিন দফায় বাংলাদেশের ১৮ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের কাছে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে দুই দফায় ১১ জনকে এবং সেন্ট মার্টিন উপকূল থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। এ নিয়ে গত চার দিনে অর্ধশতাধিক জেলে অপহরণের শিকার হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

বেলা ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়ায় নাফ নদীর মোহনায় প্রথম অপহরণের ঘটনা ঘটে। মাছ ধরে ফেরার সময় ছয়জন জেলেসহ একটি ট্রলার মিয়ানমারের উপকূলে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। অপহরণের শিকার জেলেদের নাম জানা যায়নি। টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালিয়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, জেলেসহ যে নৌযানটি আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে, সেটি আবদুল হাফেজ নামের এক মাঝির। নৌযানটিতে হাফেজসহ ছয়জন মাঝিমাল্লা ছিলেন। আরাকান আর্মি স্পিডবোট নিয়ে যখন ধাওয়া করছিল, তখন মাঝি আবদুল হাফেজ মুঠোফোনে বিষয়টি তাঁকে জানান। মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

দুপুর ১২টার দিকে একই স্থান নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে মাছ ধরার নৌযানসহ ৫ জেলেকে ধরে নিয়ে যান আরাকান আর্মির সদস্যরা। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গফুর। ট্রলারটির মালিক শাহপরীর দ্বীপ ডাঙ্গরপাড়ার সৈয়দ আলম বলে জানান তিনি।

ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেরা হলেন ইমাম হোসেন, রশিদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, নুর আলম ও মনজুর আলম। তাঁরা সবাই শাহপরীর দ্বীপের ডাঙ্গরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

মাঝি ইমাম হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল গফুর বলেন, আজ দুপুরের দিকে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় স্পিডবোট নিয়ে ধাওয়া করে নৌযানসহ পাঁচ জেলেকে ধরে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যান আরাকান আর্মির সদস্যরা।

আজ বেলা দুইটার দিকে তৃতীয় অপহরণের ঘটনা ঘটে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে সাগর থেকে মাছ ধরতে যাওয়া সাতজন জেলেকে ট্রলারসহ ধরে নিয়ে যান আরাকান আর্মির সদস্যরা। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ কায়ুকখালিয়া ঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ।

নৌযানটির মালিক টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালিয়াপাড়ার নুরুল কায়সার বলে জানান সাজেদ আহমেদ। নৌযানটিতে থাকা অপহৃত জেলেদের নাম জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আজ বিকেল পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৬২ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিজিবির প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনা হয়েছে। বাকিরা এখনো আরাকান আর্মির কাছে আটক আছেন।

জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আরাকান আর্মির সদস্যরা সাগর থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

টেকনাফে বড় আকারের ২৫০টি মাছ ধরার ট্রলারে অন্তত তিন হাজার জেলে কর্মরত আছেন বলে জানান কায়ুকখালিয়া ঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ। অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা আতঙ্কিত বলে জানান তিনি। সাজেদ আহমদ বলেন, গত বছর ডিসেম্বরে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের বেশির ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর পর থেকে নাফ নদীতে মাছ ধরার বিষয়ে একধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে তারা। এ কারণে জেলেদের তারা অপহরণ করছে। পাশাপাশি সে দেশে তীব্র খাদ্যসংকটের কারণেও মাছ লুট করছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন