[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর খবরে ফেসবুকজুড়ে শোকের ছায়া

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার | ছবি: সংগৃহীত

খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা তাঁকে স্মরণ করে আবেগঘন স্মৃতিচারণ করেছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তাঁর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

নিখোঁজ হওয়ার আগে অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে বিভুরঞ্জন সরকার ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত অঙ্গনের নানা সীমাবদ্ধতা ও সংকটের কথা তুলে ধরেছিলেন। সেই লেখাটি পাঠ করার পর অনেক পাঠকের মনে গভীর দাগ কেটে যায় এবং অনুরণন তোলে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই সহকর্মী সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীরা শোকাভিভূত হয়ে পড়েন।

‘দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সব প্রাণী সুখী হোক’—বিভুরঞ্জন সরকারের খোলা চিঠির এই মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জ ই মামুন লেখেন, ‘নিখোঁজের দুদিন পর প্রখ্যাত কলামিস্ট, সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ পাওয়া গেলো মেঘনা নদীতে। কী আক্ষেপ, হতাশা আর অভিমান নিয়ে তিনি চলে গেলেন, তা প্রতিটি শব্দে-অক্ষরে ফুটে উঠেছে তার জীবনের শেষ লেখায়। আমাদের ক্ষমা করবেন, শ্রদ্ধেয় বিভু দা!’

সাবেক সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান লেখেন, ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম কলামিস্টদের একজন সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার। কিছুক্ষণ আগে মেঘনা নদীতে তার মরদেহ ভেসে উঠেছে বলে খবর দেখছি। বৃহস্পতিবার থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের আগে খোলা চিঠি আকারে এই লেখাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেইল করেন ২১ আগস্ট সকাল সোয়া ৯টায়। ফুটনোটে তিনি লেখেন, “জীবনের শেষ লেখা হিসেবে এটা ছাপতে পারেন।” 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ওইদিন ১০টার দিকে অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়ে থানায় জিডি করেছে পরিবার। বিভুদাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। শৈশবে তার লেখা পড়েছি। সর্বশেষ  দৈনিক আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। আজকের পত্রিকায় আমি মাঝে মধ্যে কলাম লিখেছি এবং সেই সুবাদে নিয়মিত কথা হয়েছে। ভীষণ ভালো মানুষ। সৎ মানুষ।‌ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কলাম লিখেছেন। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ভীষণ সৎ।  বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এমন সৎ মানুষ খুব বেশি নেই।’ 

নিজের খোলা চিঠিতে বিভুরঞ্জন সরকার নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিক্যাল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েট থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন। সর্বশেষ একটা কলাম প্রকাশ নিয়ে চাপের কথাও বলেছেন তিনি। 

বিভুরঞ্জন সরকারের সর্বশেষ খোলা চিঠি পড়লে আপনি বুঝবেন কীভাবে এই রাষ্ট্র, সমাজ এবং মানুষেরা একজন সৎ শ্রেষ্ঠ সাংবাদিককে হত্যা করে।

আমিন রশীদ নামের একজন লেখেন, ‘বলেছিলাম বিভুদার লেখাটা আসলে সুইসাইড নোট। এখনই জানলাম তার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।’ 

সাংবাদিক আহসান কবির লেখেন, ‘বিদায়ী স্যালুট শ্রদ্ধেয় বিভুরঞ্জন দাদা। সাংবাদিকতা জীবনের শুরুতে আপনি ছিলেন। আপনি থাকবেনও আমার কাছে বেদনার বংশধর হয়ে। দাদা এভাবে চলে যেতে নেই। 

সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন লেখেন, ‘পরিবার হয়তো নিশ্চিত করবেন এই লাশ বিভুদার। কিন্তু আসলে এই লাশ সৎ সাংবাদিকতার।’

গোলাম মোর্তজা ধ্রুব নামের একজন লেখেন, ‘যেকোনও সাংবাদিকের মৃত্যু, নির্যাতন ও অসহায়ত্ব আমাকে ভীষণভাবে কাঁদায়-পোড়ায়। আমি বিভুদাকে চিনতাম তার লেখা পড়ে। ওরে জীবন তুই কেন এতো পাষাণ, কেন এতো নিষ্ঠুর। এ জীবন কেনও আর ফিরে আসে না। কত আঘাতে আঘাতে গড়া এ জীবন কেন এতো সহজে ফুরিয়ে যায়।’

হাসান মিসবাহ নামে একজন লেখেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার জন্য কত হা-হুতাশ, কত দুঃখ এই সমাজের। অথচ বেঁচে থাকতে তার যন্ত্রণা বুঝা দূরে থাক, তার কথা শোনার সময়ও কারও নেই।’

সফিউল আজম রাজন লেখেন, ‘কতজন কত কিছু পেয়েছে। অথচ উনার মতো সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কিছুই পাননি। উনার মতো লেখনী কয়জনের ছিলো? রাম, শ্যাম, যদু, মধুও প্লট পেয়েছেন সাংবাদিক কোটায়। কিন্তু উনি দুবার আবেদন করেও পাননি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে কতজন সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু উনি আবেদন করলেও তাকে দেওয়া হয়নি। এমন একজন মেধাবী ও কমিটেড মানুষ শুধুমাত্র অভাবের কারণে এভাবে চলে গেলেন। এ দায় কার? জানি এ নিয়ে কারও কিছু যাবে আসবে না। কাঁদবে শুধু পরিবার। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি একরাশ ঘৃণা জানিয়ে রাখলাম।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন