{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি: ধর্ম, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

শাহ নেয়ামত উল্লাহ ওয়ালীর সমাধি ছবি: উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া 

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর ও পুরুষানুক্রমিক ওলী ছিলেন শাহ সুফি সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.)। ষোড়শ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আউলিয়া হিসেবে তিনি পরিচিত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে তাঁর মাজার আজও এক শ্রদ্ধা ও আধ্যাত্মিক অনুভূতির স্থান।

মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ সমাধি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, ঐতিহাসিক ও নান্দনিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের ফিরোজপুর গ্রামে অবস্থিত মাজারটি সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে জিয়ারত ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন।

মুঘল আমলের প্রাচীন নিদর্শন
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এ স্থাপনাটি মুঘল যুগের প্রথম দিককার সমাধি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। শাহজাহান ও মমতাজ মহলের দ্বিতীয় পুত্র, বাংলার সুবাহদার শাহ সুজা শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে স্বাগত জানান। পরে তিনি তাঁকে ফিরোজপুরে একটি আস্তানা, একটি তিন গম্বুজ মসজিদ ও বসবাসের জন্য বিখ্যাত ‘তাহখানা ভবন’ উপহার দেন। দীর্ঘ ৩৩ বছর এ অঞ্চলেই ইসলাম প্রচার করেন সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ।

১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৬৬৯ সালে) তাঁকে তাহখানা প্রাঙ্গণেই সমাহিত করা হয়। এখানেই তাঁর পরিবার ও কয়েকজন শিষ্যের কবরও রয়েছে।

স্থাপত্যরূপ
মাজারটি একটি উঁচু ভিটের ওপর স্থাপিত বর্গাকৃতির এক গম্বুজবিশিষ্ট ইমারত। ইট-সুরকির তৈরি এ সমাধির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় ৪৯ ফুট। চার পাশে খিলান-দরজা এবং প্রতিটি কোণে বুরুজ রয়েছে, যেগুলো গম্বুজাকৃতি হয়ে উপরে উঠেছে। মূল ছাদের ওপরে রয়েছে একটি কলসদণ্ড।

দেয়ালে মোট ১২টি প্রবেশপথ থাকায় একে ‘বারো-দুয়ারী মাজার’ও বলা হয়। ভেতরে একটি বর্গাকার কক্ষ, চার কোণে ছোট ঘর এবং মাঝেমধ্যে অপেক্ষাকৃত বড় ঘর রয়েছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজের নিচেই শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.)-এর সমাধিস্থল। সমগ্র দেয়ালে চুনসুরকি ব্যবহার করা হয়েছে, যা নির্মাণশৈলীতে প্রাচীন সৌন্দর্য যোগ করেছে।

শিলালিপি ও ধর্মীয় তাৎপর্য
মাজারে দুটি শিলালিপি পাওয়া গেছে—একটি তোঘরা এবং অন্যটি নাসখ-নাস্তালিক লিপিতে। এতে কোরআনের আয়াত খচিত রয়েছে, যা এ স্থাপনাটির ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে।

উরস ও স্থানীয় আয়োজন
প্রতিবছর পহেলা মহররম শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.)-এর জন্ম ও মৃত্যুর দিন হিসেবে পালিত হয়। দিনটিতে হাজারো মানুষ মাজারে সমবেত হন। ভাদ্র মাসের শেষ শুক্রবারও এখানে উরস অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে মিলাদ, জিকির, গিলাফ পরানোসহ নানা ধর্মীয় আয়োজন চলে।

পীর সাহেবের বংশধর আলহাজ শাজাহান আলী প্রতিবছর নতুন চাদর বা গিলাফ পরিয়ে দেন। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত মাজার পরিচালনা কমিটি সব অনুষ্ঠান পরিচালনা করে।

যাতায়াত ও দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এ মাজার। চার্জার রিকশা, সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেলযোগে যাওয়া যায়। সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়ক থেকে পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গণ।

যাতায়াত সুবিধাজনক হলেও মাজারের আশপাশে আবাসিক হোটেল বা ভালো মানের রেস্তোরাঁ নেই। তবে চার কিলোমিটার দূরে ছোট সোনামসজিদ এলাকায় মোটেল ও মধ্যমানের কয়েকটি হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে। ফলে দর্শনার্থীদের জন্য ভ্রমণটি তুলনামূলক সহজ ও স্বস্তিদায়ক।

ঐতিহ্য ও মহিমা
শাহ সুফি সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.) শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই নন, তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিক গুরুও। ইসলাম ধর্মের হাকিকত ও মারেফাত প্রচারে তাঁর অবদান আজও আলোচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে তাঁর সমাধি। প্রতিদিন বহু মানুষ মাজারে এসে ইতিহাস, ধর্ম ও স্থাপত্যের এক অপূর্ব সমন্বয় অনুভব করেন।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন