প্রকৌশলীদের আন্দোলন: কমিটির সভায় ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন
![]() |
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ফাওজুল কবির খান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের দাবি পর্যালোচনায় এবার ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এই ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান থাকবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যেসব সরকারি সংস্থা প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেয়, সেসব সংস্থার প্রধানকে ওয়ার্কিং গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকৌশলী শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে গতকাল বুধবার বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে সভাপতি করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আজ এই কমিটি প্রথম বৈঠক করেছে।
সভা শেষে কমিটির আরেক সদস্য উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের এই সমস্যা নতুন নয়। বহুদিন আগের সমস্যা এটা। এ সমস্যার সমাধান করতে গেলে সবার সঙ্গে বৈঠক করতে হবে, কথা বলতে হবে। এ কারণে ১৪ সদস্যের একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।
যেসব সংস্থা প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেয়, তারা এ ওয়ার্কিং গ্রুপে থাকবে উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তাঁরা বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের কথা শুনবেন। এরপর তাঁদের মধ্যে যাঁরা প্রণিধানযোগ্য, যাঁরা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল, তাঁদের বক্তব্য শোনা হবে। এখানে আইনগত কোনো বিষয় আছে কি না, সে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। এরপর কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে।
যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা তাঁদের বক্তব্য যেন লিখিত আকারে ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান গণপূর্ত সচিবকে দেন। চাইলে তাঁরা কমিটির সঙ্গে আলোচনাও করতে পারেন। ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গেও বসতে পারেন। এ সমস্যার রাতারাতি সমাধান হবে না। কমিটিকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কমিটি সুপারিশ তুলে ধরবে।
কমিটির প্রধান ফাওজুল কবির খান বলেন, মূল কমিটি আন্দোলনকারী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বসবে। যেসব সরকারি সংস্থা প্রকৌশলী নিয়োগ দেয়, বিশেষ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তাদের সঙ্গেও কমিটি বসবে।
এটা তো দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আশু সমাধান কী? সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে কমিটির প্রধান ফাওজুল কবির খান বলেন, এটাই সমাধান। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা চাইলে যেকোনো সময় ওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে বসতে পারবেন। প্রকৌশলীদের তিন দফা, ডিপ্লোমাদের সাত দফা দাবি আছে। উভয় পক্ষের কথা শুনতে হবে, বুঝতে হবে। নিরপেক্ষতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। তাঁদের কাজ হচ্ছে সেতু নির্মাণ করা। দুই পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসা।
এক প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ওয়ার্কিং গ্রুপ আজ থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগামী রোববার প্রথম বৈঠক হবে।
প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিদের পেশাগত দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটি গঠনের বিষয়ে গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই কমিটিতে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে সভাপতি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সওবা) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকার ‘প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারী ও ডিপ্লোমাধারীদের পেশাগত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত কমিটি’ গঠন করেছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সভাপতি প্রকৌশলী ম. কবির হোসেন, বোর্ড অব অ্যাক্রেডিটেশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনিক্যাল এডুকেশনের সভাপতি প্রকৌশলী তানভির মঞ্জুর।
প্রথম বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির খান বলেন, আজকের বৈঠকে আটজন সদস্যের মধ্যে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। একজন দেশের বাইরে, অন্যজনও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
প্রকৌশলীদের তিন দফা ও ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো ৯ম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা; ১০ম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারী ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যাঁরা সম্পন্ন করবেন, তাঁরাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের সাত দফা দাবি হচ্ছে প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করতে হবে এবং উপসহকারী প্রকৌশলী পদ কেবল পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ রাখতে হবে। সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানি কোম্পানির জনবল কাঠামোয় বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১:৫ নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির কোটা ৩৩ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করতে হবে। প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রকৌশলীদের অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বা পেশা পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার মানোন্নয়নে আধুনিক কারিকুলাম ইংরেজিতে প্রণয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১২ নিশ্চিতকরণ, ল্যাব ও ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন, কাঁচামালের সরবরাহ এবং ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের যথাযথ সুবিধা প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো এবং ডিপ্লোমা সনদধারীদের জন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন