[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ফটিকছড়িতে মবের গণপিটুনিতে দুই কিশোর আহত, রক্ত দিতে হচ্ছে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

আহত কিশোর মানিকের শয্যার পাশে তাঁর মা রোজি আক্তার। শুক্রবারের মারধরের পর থেকে কথা বলছে না সে। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলার ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে এক দিকে তাকিয়ে ছিল কিশোর মুহাম্মদ মানিক। ডান হাতটা চাদরে ঢাকা। সেখানে প্লাস্টার করতে হয়েছে। ভেঙেছে হাতের বেশ কয়েকটি জায়গায়। বাঁ পায়ের পেশিও ক্ষতবিক্ষত। মাত্র ১৪ বছর বয়স। শরীরজুড়ে ব্যথা থাকলেও মুখে কোনো শব্দ নেই। গত শুক্রবার সকালে ঘটনার পর থেকেই কোনো কথা বলেনি মানিক। কেবল ঘুমের ঘোরে আঁতকে উঠছিল মাঝে মাঝে।

মানিকের বিছানায় বসে ছিলেন মা রোজি আক্তার। এক পাশে দাঁড়িয়ে ওষুধপত্র এগিয়ে দিচ্ছিলেন বড় ভাই মুহাম্মদ রাশেদ। ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাশেদের কাছে তাঁর ভাইয়ের অবস্থা জানতে চাইলে বলেন, এখনো রক্ত লাগছে। ডান হাতের কয়েক হাড় ভাঙা। পায়েও অনেক ক্ষত আছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রামে মব সৃষ্টি করে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে মানিকসহ আরও দুই কিশোরকে সেতুর ওপরে বেঁধে মারধর করে স্থানীয় একদল যুবক। ওই ঘটনায় কিশোর মুহাম্মদ রিহানের মৃত্যু হয়। অপর কিশোর মুহাম্মদ রাহাত চমেক হাসপাতালের পাঁচতলার অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। মানিকের মতো তার শারীরিক অবস্থাও গুরুতর। শরীরের একাধিক হাড় ভেঙেছে। থেতলে গেছে মাংসপেশি।

রোববার দুই কিশোরের খোঁজ নিতে গেলে কথা হয় তাদের স্বজনদের সঙ্গে। স্বজনেরা বলছেন, ঘটনার পর ট্রমা থেকে বের হতে পারেনি তারা। কথা বলছে না দুজনের কেউই। ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে মানিকের ভাই রাশেদ সেদিনের ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি জানান, ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী তিন কিশোরকে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত টানা পাঁচ ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। এমনকি মৃত্যু হয়েছে জেনেও রিহানকে পেটানো থামায়নি তারা। মানিক আর রাহাত বেঁচে ফিরলেও তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙেছে তাদের।

তিন কিশোর একই গ্রামের বাসিন্দা ও বন্ধু। গত বুধবার তারা কক্সবাজার গিয়েছিল বেড়াতে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাঞ্চননগর গ্রামে ফিরতেই হামলার শিকার হয় তারা। এভাবে কেন তাদের মারা হলো, এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না রাশেদ।

হাসপাতালের পঞ্চম তলায় অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি মুহাম্মদ রাহাতের ডান হাত ও বাঁ পায়ের একাধিক হাড় ভেঙেছে। শুক্রবার ভর্তি হলেও রাহাতের জ্ঞান ফিরেছে আজ সকালে। চোখ খুললেও কথা বলতে পারছে না সে।

রাহাতের মায়ের নামও রোজি আক্তার। ছেলের বিছানার পাশে বসে তিনি আঘাতের চিহ্নগুলো দেখান। ভাঙা স্থানে প্লাস্টার পড়েছে। বাকি খোলা স্থানগুলোতে কালশিটে। রোজি আক্তার জানান, দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে রাহাতকে। আরও লাগতে পারে বলেছেন ডাক্তার। ছেলে কিছু খেতে পারছে না।

রাহাতকে রেখে ওয়ার্ডের বাইরে বেরিয়ে আসতেই কথা হলো তার মামা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বললেন, তরল খাবার ও স্যালাইন ছাড়া কিছু খেতে পারছে না রাহাত। চিকিৎসক ও অন্যরা খোঁজখবর নিয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্ট তাঁরা।

রাহাতের মামা আনোয়ার আর মানিকের বড় ভাই রাশেদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা। এমন মারধরের কারণ ভেবে পাচ্ছেন না তাঁদের কেউই। কেবল ঘটনার বিবরণটাই বলে গেলেন। এর মধ্যে নানা সংবাদমাধ্যম সূত্রে পাঠকদের তা জানাও হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে একটি অটোরিকশা নিয়ে রিহানদের বাড়ির সামনে থামে তিন কিশোর। এ সময় হঠাৎ চোর চোর বলে তাদের ধাওয়া করেন লাঠিসোঁটা হাতে থাকা সাত থেকে আটজন। তাঁদের পিটুনি থেকে বাঁচতে কিশোরেরা দৌড়ে আশ্রয় নেয় নির্মাণাধীন একটি দোতলা বাড়ির ছাদে। তাদের ধরে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে একটি সেতুর ওপর আনা হয়। তিনজনকে বেঁধে পেটানো হয় বেশ কয়েক ঘণ্টা।

হাতে ও পায়ের একাধিক হাড় ভেঙেছে কিশোর রাহাতের। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ ঘটনায় নিহত মাহিনের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেন নিহত কিশোরের মা খদিজা বেগম। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুহাম্মদ নোমান (২২) ও মুহাম্মদ আজাদ (২৩) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্বজনেরা বলছেন, আসামিরা এলাকাতেই আছেন।

পুলিশের ধারণা, পূর্বের বিরোধ থেকে নাটক সাজিয়ে ওই কিশোরদের পেটানো হয়েছে। ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই গ্রামের যুবকেরা হামলা করায় এটিকে গণপিটুনি বা চোর সন্দেহ মারধর মনে হচ্ছে না। তাদের মধ্যে হয়তো কোনো বিরোধ বা শত্রুতা থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন