প্রতিনিধি নড়াইল
![]() |
মাসুম বিল্লাহ | ছবি: পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত |
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মাসুম বিল্লাহ (২১) নামে এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবারের দাবি, প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে ঢাকা থেকে সেখানে গিয়ে খুন হয়েছেন ওই তরুণ। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে ওই প্রেমিকার পরিবারের সম্পৃক্ততা আছে। তবে প্রাথমিকভাবে এটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে ধারণা করছে পুলিশ।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল মধ্যপাড়া গ্রামের সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে নড়াইলের লোহাগড়া ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুমতি সেতুর ওপর অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন মাসুম। বেলা ১১টার দিকে মাসুমকে সেখান থেকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান সুজন নামের এক অটোরিকশাচালক। এ সময় মাসুমের কাছে থাকা ভাঙা একটি মুঠোফোন থেকে সিম খুলে নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুজন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতির সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাসুমের মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ লোহাগড়া থানা-পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাতেই জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
সুজন বলেন, মাসুমকে যে জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে দুর্ঘটনার কোনো লক্ষণ দেখেননি। আশপাশের লোকজনকেও দুর্ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তাঁরাও কিছু দেখেননি বলে জানান। মাসুমের শরীরের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, সেখানে তাঁকে কেউ গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।
মাসুমের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, লোহাগড়া উপজেলার এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিকভাবে বিষয়টি মেনে না নেওয়ায় তাঁদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। গত বুধবার কাজের সন্ধানে ঢাকায় যান মাসুম। এর মধ্যে প্রেমিকার বিয়ের খবর পেয়ে গতকাল সকাল ছয়টার পর রাজধানীর বাড্ডা থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ৯টার দিকে মুঠোফোনে কল করে মাসুমের অবস্থান লোহাগড়ায় বলে জানা যায়। পরে মাসুমের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।
মাসুমের চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তির কাছে ওই কিশোরীর চাচা সকাল ১০টার দিকে ফোন করে বলেন, “মাসুম ঝামেলা করতেছে। তাঁর ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে।” অন্যদিকে আমরা খবর পাই, পাশের এলাকার মানিকগঞ্জ বাজারের এক পারলারে ওই কিশোরীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছে মাসুম। পরে আমরা মাসুমকে খুঁজতে চেষ্টা করি। কিন্তু তাঁর ফোনটাও বন্ধ ছিল। পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে একজন ফোন করে মাসুমের কথা জানালে আমরা সেখানে যাই।’
ওই কিশোরীর পরিবার মাসুমকে হত্যা করেছে দাবি করে শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বড় গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট করলে তো হাত-পা অক্ষত থাকার কথা না। আর মাসুমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। মাসুমকে ওরা হত্যা করেছে।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ওই রোগীকে অচেতন অবস্থায় আনা হয়েছিল। পরে তিনি মারা যান। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে এগুলো দেখে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না—এটি দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড।
ঘটনার পর থেকে মাসুমের প্রেমিকার পরিবারের সদস্যরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য। তবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশের ধারণা, ওই তরুণ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। লোহাগড়া থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।