প্রতিনিধি কুষ্টিয়া

সাজিদ আবদুল্লাহ | ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলসংলগ্ন পুকুর থেকে শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা করেছেন তাঁর বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ দেলওয়ার। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি বাদী হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি এজাহার জমা দেন। দুই ঘন্টা পর সন্ধ্যায় সেটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করে পুলিশ।

গতকাল রাত সোয়া ১০টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ৩০২ ধারায় অভিযোগ এনে হত্যা মামলা করেছেন সাজিদের বাবা। মামলাটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন তদন্ত করবেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলাটির তদন্ত ডিবি, পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থা করতে পারে কি না—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ আরও বলেন, আপাতত পরিদর্শক (তদন্ত) মামলাটি তদন্ত করবেন। যদি প্রয়োজন মনে হয় বা মামলার বাদী লিখিতভাবে আবেদন করেন, তবে সেটা অন্য কোনো সংস্থা তদন্তভার নিতে পারে।

এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কী হতে পারে,এই প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল মাহমুদ বলেন, যেহেতেু সাজিদের বাবা মামলার বাদী। সেহেতু মামলার বিষয়ে তিনিই সবকিছু। এখানে তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া আর কোনো কিছু এখতিয়ার তাদের নেই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের সময় থেকেই এই বিষয় নিয়ে কাজ করছি। হত্যা মামলাটি তদন্তও করা হবে। কাজ চলমান রয়েছে।’

নিহত সাজিদ আবদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৭ জুলাই সন্ধ্যা ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের সামনের পুকুর থেকে তাঁর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় তাঁর পরিবার ও সহপাঠীরা অভিযোগ করেন, সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল।

এদিকে সাজিদ হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে মিছিলটি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বিচার বিচার, বিচার চাই, সাজিদ হত্যার বিচার চাই’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’; ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, প্রশাসন জবাব চাই’; ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, খুনিদের ফাঁসি দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচির একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘সাজিদের হত্যাকাণ্ডের অবশ্যই বিচার হবে। যেহেতু এটি হত্যাকাণ্ড, সেহেতু বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাদের চাহিদা মোতাবেক যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আর এই দাবি নিয়ে তোমাদের (শিক্ষার্থীদের) নতুন করে আসা লাগবে না। প্রশাসনই তোমাদের টাইম টু টাইম জানাবে, আমরা কী করছি।’