প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার | ছবি: সংগৃহীত |
‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তাঁর এই আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। আবেদনের একটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নানা আলোচনা হচ্ছে।
ফেসবুকে অনুদান চাওয়ার চিঠির অনুলিপি দিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন মঙ্গলবার বলেছেন, দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে। বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা “জুলাই আন্দোলন” হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহীদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি “৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব।” এই উৎসবে রাজশাহীর শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।’
এই আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কে এস কে হৃদয়। তিনি ‘৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের অর্গানাইজার’ এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার ডিরেক্টর ও কো-ফাউন্ডার। ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবে সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছে।
অবশ্য এ ব্যাপারে জানার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, শুধু সালাউদ্দিন বলে নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সংগঠন, যারা গত এক বছরে এ ধরনের কাজের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি তাদের ‘রিকমেনড’ করে দিয়েছেন। এটা তাঁর দায়িত্ব বলে তিনি মনে করেন।
চিঠি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার পর ২৭ জুলাই ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে তিনি বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে দাবি করেছেন। জুলাইয়ের পর চাইলে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারতেন উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, একটা বড় কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে। একটা প্রস্তাবনা রাবি প্রশাসনকে দেওয়া হয়। তবে প্রশাসন জানায়, এখন টাকা নেই। তবে টাকা বাদে যেকোনো সহযোগিতা তারা দেবে। এরপর সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক, নগর ভবন—এগুলাতে প্রস্তাবনা দেন।
সালাউদ্দিন লিখেছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম একবারে প্রোগ্রাম শেষে আপনাদের সবকিছু ক্লিয়ার করে দিতে। কিন্তু আমি আসলে আর নিতে পারতেছি না। এত অসুস্থতার মধ্যে একটা আয়োজন করতে চাচ্ছি, সেটা নিয়েও সমস্যা। এখন পর্যন্ত একই প্রপোজাল নিয়ে প্রায় ১৫টি ব্যাংকের হেড অফিসে যাওয়া হয়েছে, সবাই রিজেক্ট করেছে। শুধুমাত্র ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার টাকা। চেম্বার অব কমার্স ৩০ হাজার টাকা, নগর ভবন-২ লক্ষ টাকা। এই ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট আমরা ম্যানেজ করতে পারি নাই।’
আজ মঙ্গলবার আরেক স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলেন। এই আয়োজনের প্রতিটা টাকার হিসাব দিয়ে দেবেন তিনি। আয়োজন শেষে সব ডকুমেন্টসের স্বচ্ছতা তুলে ধরবেন তিনি।
সালাউদ্দিন আরও লেখেন, ‘বিজয় উৎসব গত বছর করতে চেয়েছিলাম পারি নাই ফেনীর বন্যার কারণে, রাজশাহীর বিশেষ অবদান ছিল এই আন্দোলনে, তাই বিজয় উৎসবও হবে রাজশাহীতে।’