মহিউদ্দিন ঢাকা
![]() |
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। মূল চুক্তিতে নির্ধারিত সময় ছিল প্রথম ইউনিটের জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবর আর দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর। এখন নতুন চুক্তিতে প্রথম ইউনিটের জন্য ২০২৬ সালের ডিসেম্বর, দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য ২০২৭ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ২০ জুন রাশিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বিশেষজ্ঞদের যাতায়াতে জটিলতা, যন্ত্রপাতি সরবরাহে দেরিসহ নানা কারণে কাজ পিছিয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে তা-ও নিয়মিত পরিশোধ করা যায়নি।
নতুন করে কোনো দেরি হয়নি। এখন কাজ স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে। তবে অতীতে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে দেরি হয়েছে। ফলে ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে উৎপাদন শুরু হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার।
প্রকল্পের নীতিনির্ধারণে রাশিয়া ও বাংলাদেশের একটি যৌথ সমন্বয় কমিটি রয়েছে। গত বছর ঢাকায় ওই কমিটির বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে চূড়ান্ত চুক্তি হতে সময় লেগে যায়।
পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্র জানায়, শুরুতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেড় বছর বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। এতে রাজি হয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কারিগরি বিবেচনায় প্রকল্পের কাজ কোনোভাবেই আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়।
রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে তা-ও নিয়মিত পরিশোধ করা যায়নি।
চুক্তি অনুসারে সময় বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, সময়মতো উৎপাদন শুরু না হওয়ায় কেন্দ্রটি কোনো আয় করতে পারছে না। এতে সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেবে।
প্রকল্প পরিচালক মো. কবীর হোসেন বলেন, ‘নতুন করে কোনো দেরি হয়নি। এখন কাজ স্বাভাবিকভাবেই এগোচ্ছে। তবে অতীতে মহামারি ও যুদ্ধের কারণে দেরি হয়েছে। ফলে ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে উৎপাদন শুরু হবে।’
গ্রিডের সমস্যার কথা বলা অজুহাত ছিল। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে বিকল্প গ্রিড আগে থেকেই তৈরি ছিল। আসলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হতে পারেনি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রূপপুরে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। চুল্লিপাত্রে পারমাণবিক জ্বালানি ঢোকাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর শুরু হবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চুল্লিপাত্রে জ্বালানি ঢোকানোর পর অন্তত ছয় মাস পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলবে। এ সময় ধাপে ধাপে পরীক্ষা ও আন্তর্জাতিক অনুমতি নিতে হবে। এতে আগামী বছরের জুনের আগে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর তেমন সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রিডের সমস্যার কথা বলা অজুহাত ছিল। পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে বিকল্প গ্রিড আগে থেকেই তৈরি ছিল। আসলে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত হতে পারেনি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সময়মতো উৎপাদনে এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি আমদানির ওপর চাপ কমত উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্প পেছানোয় জনবলের পেছনে খরচ বাড়ছে। এটি বাস্তবায়নে ১০ বছরের বেশি সময় লাগলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।