পাটগ্রাম থানায় ‘বিএনপির নেতা–কর্মীদের’ হামলা-ভাঙচুর, আসামি ছিনতাই
প্রতিনিধি লালমনিরহাট
![]() |
পাটগ্রাম থানায় হামলার সময় ভাঙচুর করা হয় জানালার কাঁচ। ছবিটি বৃহস্পতিবার সকালে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পাথরমহালের রয়্যালটির নামে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ইজারাদারের দুই কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি দল থানায় ঢুকে ভাঙচুর করে সাজাপ্রাপ্ত ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভাঙচুর করে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করেন। হামলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশের আটজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও এক কনস্টেবল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, এ ঘটনায় বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে পাটগ্রাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় পুলিশকে দায়ী করেছেন।
ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর রেঞ্জের পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), অতিরিক্ত ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বলেছেন, থানায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড
পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের ধরলা নদীর নয়টি পাথরমহাল থেকে পাথর উত্তোলনের ইজারা দেয় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)। ইজারা নেন জেলা বিএনপির সদস্য ও পাটগ্রাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির এবং পাটগ্রাম পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেন। ইজারার শর্ত অনুযায়ী সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল, অযান্ত্রিক ও সনাতন পদ্ধতিতে বালুমিশ্রিত পাথর উত্তোলন করতে হবে। কোনোভাবেই এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র), ড্রিল ড্রেজার কিংবা বোমা মেশিন ব্যবহার করা যাবে না।
তবে ইজারাদারের লোকজন সেই শর্ত মানছেন না বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। ইজারাদারের লোকজন নির্ধারিত স্থানের বাইরে বালু-পাথরের গাড়ি থামিয়ে রয়্যালটির নামে চাঁদা আদায় করছিলেন। অভিযোগ পেয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় পাটগ্রাম পৌরসভার সরেও বাজারে লালমনিরহাট-পাটগ্রাম সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার। এ সময় চাঁদা আদায়ের রসিদসহ ইজারাদারের দুই কর্মচারী সোহেল রানা ও বেলাল হোসেনকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে দণ্ড পাওয়া দুজনকে থানায় আনলে হামলার ঘটনা ঘটে।
পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই দুজনকে থানায় নিয়ে আসার পরপরই ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ থানায় হামলা চালান। থানার বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার, জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশের ভ্যান ভাঙচুর করে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তাঁরা। এতে আমিসহ পুলিশের ৮ জন আহত হয়েছি।’ তিনি বলেন, আহত এসআই সাখাওয়াত হোসেনে ও মশিউর রহমানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন ইজারাদার
এ বিষয়ে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি বাদশা জাহাঙ্গীরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইজারাদার বৈধভাবে নয়টি পাথরমহালের ইজারা পেয়েছেন। সেই অনুযায়ী লোকজন দিয়ে পাথর ও বালু উত্তোলন করছেন। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে অর্থনৈতিক কোনো বিষয়ে হয়তো তাঁদের দ্বিমত হয়। গতকাল ওসির নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এ সময় দুজনকে ধরে এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই মাসের জেল দেয়। পরে লোকজন থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পুলিশ অতর্কিতভাবে লোকজনের ওপর চড়াও হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার নয়টি নির্দিষ্ট স্থানে পাথরমহালের ইজারা দিয়েছে সরকার। সুনির্দিষ্ট স্থানের বাইরে কোনো ধরনের পাথর উত্তোলন করা যাবে না। এখানে বাইরে ট্রাক নিয়ে বা বাইরে থেকে চাঁদা তোলা, রসিদ দেওয়া, ব্যানার টাঙানো—এসবের সঙ্গে পাথরমহালের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যা করছে, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি।
বিজিবি মোতায়েন
বিকেলে ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন, ইউএনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছেন। রাত বেশি হওয়ায় আসামিদের থানায় নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা থানায় আক্রমণ করে একধরনের চ্যালেঞ্জ করেছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। যাঁদের নাম পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের দুষ্কৃতকারী হিসেবে দেখছি। পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন