পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক

বগুড়া আদালত চত্বরে অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ করছে বিএনপি–সমর্থিত আইনজীবী সমিতি। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

বগুড়া জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের নেতৃত্বাধীন জেলা আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে। নকশা ও অনুমোদন ছাড়াই এ ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে ৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান কবির।

ভবনটি নির্মাণে গণপূর্ত বিভাগ কিংবা পৌরসভার কোনো অনুমোদন না নিয়েই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে জেলা আইনজীবী সমিতি। সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এ ভবনের তহবিল সংগ্রহে নিচতলায় বাণিজ্যিক প্লট ও ওপরের তলাগুলোয় আইনজীবীদের চেম্বার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি টাকার বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চিঠিতে জেলা ও দায়রা জজ উল্লেখ করেছেন, ৪ ও ৫ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটি এবং ৬ জুলাই (আশুরা উপলক্ষে) সরকারি ছুটি থাকায় বগুড়া জেলা জজ আদালত চত্বরের গহওর আলী ভবনের সম্মুখস্থলে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে নির্মাণকাজ চলাকালে জেলা জজ আদালতের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং সাবস্টেশন পুড়ে যায়। ৪ থেকে ৬ জুলাই তিন দিন জেলা জজ আদালত ভবন ছিল বিদ্যুৎবিহীন। এতে আদালতে নিরাপত্তাঝুঁকিসহ মূল্যবান জিনিসের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আদালত প্রাঙ্গণে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদিত কোনো নকশা নেই। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত বহুতল ভবন নির্মাণের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এর আগে গত ১৬ জুন জ্যেষ্ঠ জেলা জজ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে আদালত চত্বরের ১০ শতক জায়গায় থাকা টিনশেড অপসারণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। তখন আইন মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্ট বিভাগের পূর্বানুমতি না নিয়ে কোনো স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ না করতে আইনজীবী সমিতিকে অবহিত করা হয়েছিল।

বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু নাসের চৌধুরী বলেন, ‘আদালত প্রাঙ্গণে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। অনুমোদনের জন্য কেউ যোগাযোগও করেনি।’ একই কথা বলেন বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক মাসুম আলী বেগও। তিনি জানান, পৌর এলাকায় ছয়তলা ভবনের নকশা অনুমোদনের দায়িত্ব পৌরসভার হলেও এই ভবন সম্পর্কে কোনো আবেদন জমা পড়েনি।

ভবনের তহবিল সংগ্রহে নিচতলায় বাণিজ্যিক প্লট ও ওপরের তলাগুলোয় আইনজীবীদের চেম্বার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি টাকা সংগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

বিএনপি–সমর্থক একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি। সেখানকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা তারেক রহমান ও বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গায়ের জোরে আদালতকে জিম্মি করে সরকারি জায়গায় নিজেদের ইচ্ছেমতো অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। নেপথ্যে রয়েছে আইনজীবীদের চেম্বার বরাদ্দের প্রায় ৫ কোটি টাকার বাণিজ্য। দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এভাবে গায়ের জোরে আদালত প্রাঙ্গণে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বগুড়া বার সমিতির উন্নয়নে এক টাকাও বরাদ্দ দেয়নি। আইনজীবীরা বসার জায়গা না পেয়ে গাছতলা, খোলা আকাশের নিচে আইনি সেবা দিয়ে এলেও তাঁদের বসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এখন জজ আদালত চত্বরে টিনশেড অপসারণ করে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যিক প্লট ও আইনজীবীদের চেম্বার বরাদ্দের অর্থে এ ভবন নির্মাণ হচ্ছে জানিয়ে আতাউর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদনসহ হাইকোর্ট এবং আইন, বিচার, সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বগুড়া আদালতের জ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবী বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের বসার জন্য নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজন হলে হাইকোর্ট এবং আইন, বিচার, সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যথাযথ অনুমতি সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নকশার ভিত্তিতে তা হওয়া প্রয়োজন। আদালত চত্বরে খোদ আইনজীবীদের আইন লঙ্ঘন করে এভাবে অবৈধ বহুতল ভবন নির্মাণ শুধু বেআইনি কাজ নয়, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আইন লঙ্ঘনের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।