আব্দুল্লাহ আল মারুফ কামারখন্দ

গরু নিয়ে বাড়ির পথে আব্দুল বারিক প্রামাণিক। সঙ্গে লাঠি ও ছাতা। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বয়স পঁচাত্তরের কোঠায়। শরীরটা আর আগের মতো চলে না, হাঁটতেও কষ্ট হয়। তবু থেমে নেই আব্দুল বারিক প্রামাণিক। প্রতিদিন ভোরে হাতে লাঠি আর ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মাঠে। সঙ্গে থাকে তাঁর একমাত্র সম্বল—তিনটি গরু। এদের দেখাশোনা আর দুধ বিক্রির টাকাতেই চলছে জীবনের শেষ প্রান্তের দিনগুলো।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার বড়কুড়া গ্রামের ফসলি মাঠে দেখা হয় বারিক প্রামাণিকের সঙ্গে। পরনে নেভি ব্লু রঙের টি–শার্ট আর চেক লুঙ্গি। মাঠের এক কোণে দাঁড়িয়ে বা কখনো ঘাসের ওপর বসে গরুগুলোর দিকে চোখ রেখে সময় কাটান। পাশে তিনটি গরু ঘাস খাচ্ছে। এদের যত্ন নেওয়াই এখন তাঁর নিত্যদিনের কাজ।

বারিক প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতিদিন গরুর দুধ বিক্রি করে যা পাই, তাই দিয়াই কোনোমতে আমার আর বউয়ের সংসার চলে।’

বার্ধক্যে এসে জীবনের হিসাবটা যেন ভারী হয়ে উঠেছে। বাবা আজিম প্রামাণিক অনেক আগেই মারা গেছেন। জীবনে অনেক কষ্ট করে টেনেছেন সংসারের হাল। এখন বয়স হয়েছে, শরীরটাও ভালো থাকে না। স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটে কোনোমতে। তিন ছেলেমেয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নেয় না। তিনি বলেন, ‘ওরা বিয়া কইরা আলাদা হইছে। সুখে আছে। আমরা বাঁচি না মরি—কাউরে কইলে শুনে না।’

সরকারি কোনো সহায়তা পাননি বলেও জানান তিনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য তাঁকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন দুই হাজার টাকা। কিন্তু এখনো সেই কার্ডের দেখা মেলেনি। আফসোস করে বলেন, ‘মেম্বার কইছিল কার্ড দিব। টাকাও নিছে। কিন্তু কিছুই পাই নাই।’

স্ত্রীর নাম বা বয়স জানতে চাইলে খানিক চুপ করে থাকেন বারিক প্রামাণিক। স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘নামটা ঠিক মনে নাই... বয়সও ঠিক কইতে পারি না।’

কামারখন্দ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোতালিব জানান, 'প্রতি বছর সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে বয়স্ক ভাতার জন্য অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে সুবিধাভোগীদের তালিকা করা হয়। এ বছর আট হাজার আবেদনকারীর মধ্যে ভাতা পাবেন মাত্র ৫৭৬ জন। ওই বৃদ্ধ যদি আবেদন করে থাকেন, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে অনলাইনে আবেদন না করলে কিছু করার সুযোগ নেই।'