প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাটে মাছ কিনতে ক্রেতাদের ভিড়। আজ সকালে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সামনে মাছের স্তূপ। চারপাশ ঘিরে আছেন ক্রেতারা। মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিলামে দাম হাঁকছেন বিক্রেতা। ক্রেতারা চুপ হয়ে গেলে সর্বোচ্চ দাম আবার বলছেন বিক্রেতা। ক্রেতারাও একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছেন দাম। এই চিত্র চট্টগ্রামের মাছের বৃহত্তম আড়ত নগরের ফিশারি ঘাটের।
প্রতিদিন ভোররাত থেকে এখানে বিক্রির উদ্দেশ্যে মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা। কর্ণফুলীর তীরঘেঁষা এ বাজারে নদীর পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছও ওঠে। তবে গত কয়েক দিন সাগর উত্তাল থাকায় আজ বুধবার সকালে মাছের সরবরাহ কম দেখা গেছে এ বাজারে। আড়তদার ও জেলেরা জানান, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় মাছ তেমন নেই। বিশেষ করে ইলিশের দেখা মিলছে হাতেগোনা।
আড়তদারেরা বলছেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী এখনো মাছ আসছে না ঘাটে। ছোট আকারের মাছ পাওয়া গেলেও বড় মাছ হাতেগোনা। বাজারে লইট্টা, বোয়াল, কোরাল, রুপচাঁদা, কই, কাতলা, পোয়া—এসব মাছ আসছে। তবে সংখ্যা কম। অধিকাংশ মাছ আকারে ছোট। ক্রেতাদের চাহিদা থাকলেও ইলিশের সরবরাহ খুবই কম।
ফিশারি ঘাটের মূল বেচাকেনা হয় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায় ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। তবে ক্রেতা অনুপাতে মাছ তেমন নেই। ঘাটের একটি স্থানে ক্রেতাদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দাম হাঁকছেন মোহাম্মদ সেলিম। তাঁর সামনে লইট্টা মাছের স্তূপ। ক্রেতাদের তর্ক চলছে দাম নিয়ে। একজনের চেয়ে অন্যজন কিছুটা বাড়িয়ে দাম হাঁকছেন। ৫ হাজার ৮০০ টাকা তিনবার হাঁক দিয়ে ক্রেতার কাছে মাছ বুঝিয়ে দিলেন সেলিম।
![]() |
সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে মিঠাপানির মাছ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিলামে সেলিমের কাছ থেকে মাছ কিনে নেন খুচরা বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম। নিলামে কয় কেজি কিনলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০-২৫ কেজি হবে। কেজিতে ২৫০ টাকার আশপাশে দাম পড়ল। তবে নিলামে পুরোটাই অনুমানের ভিত্তিতে নিতে হয়। কেউ জেতে, কেউ হারে, এটাও ব্যবসার অংশ। শুরু থেকেই এখানে এভাবে ব্যবসা চলে আসছে।
বাজার ঘুরে দুজন বিক্রেতার কাছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাওয়া গেল। তবে দাম জিজ্ঞাসা করতেই দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। বিক্রেতারা জানান, ইলিশের মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু বাজারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝারি আকারের ইলিশের দাম কেজিতে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। ওজন ৫৫০ থেকে ৬০০ গ্রাম। সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।
মা মাছ রক্ষায় প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। ১১ জুন রাত থেকেই সাগরে ফিরেছেন জেলেরা। তবে ঘাটগুলোতে মাছের দেখা মিলছে না। জেলারাও অনেকটা হতাশ। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে কয়েক দিনের মধ্যে মাছ উঠবে বাজারে।
![]() |
লইট্টা মাছ বিক্রির জন্য আকারভেদে বাছাই করা হচ্ছে। আজ সকালে চট্টগ্রামের ফিশারি ঘাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আড়তদার ও মৎস্য বিভাগের পরিদর্শনের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ঘাটগুলোতে ৫০০ থেকে ১ হাজার কেজির মতো মাছ উঠেছে। নগরের ঘাটগুলোতে তা ৭০০ কেজি থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি। এর মধ্যে লইট্টা, পোয়া, ইলিশ, চিংড়ি, চেউয়াসহ বিভিন্ন মাছ রয়েছে। আহরিত মাছের মধ্যে ইলিশের পরিমাণ ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মতো। এগুলোর ওজন ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম।
ফিশারি ঘাটের মাছ বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, এ বছর এখনো মাছ তেমন নেই। গত কয়েক দিন আবহাওয়া খারাপ। জেলেরা সাগরে যেতে পারছে না। তবে আসা করা যায় সামনে মাছ উঠবে। এখন বাজারে দাম একটু বাড়তি।