নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের পতাকা | ফাইল ছবি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) সইয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করছে বাংলাদেশ। আজ মঙ্গলবার দুই দিনের ভার্চ্যুয়ালি ওই আলোচনা শুরু হচ্ছে। এই চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে ইইউর সঙ্গে একটি বিস্তৃত সহযোগিতা কাঠামোয় যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে প্রথম দফার বৈঠক হয়েছিল। এই চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ, যারা ইইউর সঙ্গে এমন একটি বিস্তৃত ও বাধ্যতামূলক কাঠামোর অংশীদার হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পালোনি। এবারের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আগামী অক্টোবরে ঢাকায় তৃতীয় দফার বৈঠকে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসবে ইইউ প্রতিনিধিদল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই দিনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে দুই পক্ষ ৮৩টি ধারা–সংবলিত অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনা করবে। মূলত সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে চুক্তির ধারাগুলো চূড়ান্ত করার জন্য এ আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহত্তর এশিয়াকে বিবেচনায় নিলে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আর কাজাখস্তানের সঙ্গে পিসিএ সই করেছে ইইউ। বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর প্রস্তাবিত পিসিএতে সহযোগিতার অন্তত ৩৫ ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড আর কাজাখস্তানের সঙ্গে সই করা ইইউর পিসিএতে খাতের সংখ্যা যথাক্রমে ১৩, ১৫ ও ১৯।

প্রায় ২৫ বছর আগে ২০০১ সালে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি হয়েছিল, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল উন্নয়নসহায়তা। নতুন পিসিএ চুক্তির মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে আরও গভীর, বহুমাত্রিক ও রাজনৈতিকভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় দুই পক্ষ।

পিসিএ কী এবং এর গুরুত্ব

ইইউর ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী, পিসিএ হলো আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি, যা ইইউ ও একটি অংশীদার দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করে।

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে ইইউ অংশীদার দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংলাপ, শান্তি ও নিরাপত্তা, সুশাসন ও মানবাধিকার, বাণিজ্য, অর্থনীতি, আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা বিষয় এর মধ্যে থাকে। অর্থাৎ এই সহযোগিতার পরিধিতে রয়েছে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করা। একটি শক্তিশালী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশের বিকাশ নিশ্চিত করা। নানা ক্ষেত্রে বাণিজ্য সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়টিও এর অন্তর্ভুক্ত।

পিসিএর উপাদান

বাংলাদেশের সঙ্গে ইইউর প্রস্তাবিত পিসিএর আওতায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, ইন্টারনেট নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি, মৎস্য, দক্ষ অভিবাসন, কৃষিসহ প্রায় ৩৫টি খাত রয়েছে।

পিসিএ চুক্তি সই হলে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের যে সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে তা আর কার্যকর থাকবে না। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে ইইউর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।

রাজনৈতিক উত্তরণের অভিপ্রায়

বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সম্পর্কের পরিসর বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন করে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে ওই অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপিয়ান কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় পিসিএ চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছিল ইইউ। পরবর্তী সময়ে ইইউ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পিসিএ সই করার সিদ্ধান্ত নিলে নভেম্বরে ঢাকায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল।