রয়টার্স ব্যাংকক/নমপেন
![]() |
কম্বোডিয়ার ওদ্দার মিনচেই প্রদেশে বিতর্কিত তা মোয়ান থম মন্দির থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বিএম-২১ গ্র্যাড রকেট লঞ্চারের ওপর অবস্থান নেওয়া এক কম্বোডীয় সেনা। ২৫ জুলাই ২০২৫ | ছবি: রয়টার্স |
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে সীমান্তে আজ শুক্রবার সকালেও সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে থাই সেনাবাহিনী। তারা বলছে, হামলায় কম্বোডিয়ার বাহিনী ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি রকেটও ব্যবহার করেছে।
থাই সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কম্বোডীয় বাহিনী ভারী অস্ত্র, ফিল্ড আর্টিলারি ও বিএম-২১ রকেট সিস্টেম ব্যবহার করে ধারাবাহিকভাবে গোলাবর্ষণ চালিয়েছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে থাই সেনারা পাল্টা হামলা চালিয়েছেন।’
আগের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্তে উভয় পক্ষের গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১১ বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ দুটির মধ্যে পুরোনো সীমান্ত উত্তেজনা এ বিরল সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিল।
দুই দেশই সীমান্তের বিতর্কিত একটি এলাকায় সকালে সংঘর্ষ শুরুর জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে। প্রথমে হালকা অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ পরে ভারী গোলাবর্ষণে রূপ নেয়। অন্তত ছয় স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাগুলোর ওপর সার্বভৌমত্ব নিয়ে বহু বছর ধরেই দুই পক্ষে বিতর্ক চলছে।
এ সংঘাতে থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে একটি দিয়ে কম্বোডিয়ার সামরিক অবস্থানে আঘাত হানা হয়। থাই সামরিক বাহিনীর ভাষ্য, এ বিমান হামলার উদ্দেশ্য ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ হামলাকে ‘বেপরোয়া ও নৃশংস সামরিক আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে গত ১৩ বছরে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা। গত বুধবার থাইল্যান্ড নমপেন থেকে নিজের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে ও কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। এর আগে থাই সেনাবাহিনীর একজন সদস্য স্থলমাইন বিস্ফোরণে পা হারান। থাইল্যান্ড দাবি করে, মাইনটি প্রতিপক্ষ বাহিনীর সদস্যরাই সম্প্রতি পুঁতে রেখেছিলেন। কম্বোডিয়া এ দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ সংঘাত নিয়ে আজ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র টমি পিগট নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বেসামরিক মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবরে শোকাহত। অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধ, বেসামরিক জনগণের সুরক্ষা ও সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত মে মাসের শেষ দিকে একটি সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর থেকেই দুই দেশ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর অংশ হিসেবে সীমান্তের দুই পাশেই সেনা বাড়ানো হয় এবং কূটনৈতিক টানাপোড়েনে থাইল্যান্ডের জোট সরকার প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
থাইল্যান্ড বলেছে, দেশটির তিনটি প্রদেশে গতকাল হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই বেসামরিক নাগরিক। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আট বছরের শিশুও আছে। আহত হয়েছেন আরও ৩১ জন। কম্বোডিয়ার হতাহতের সংখ্যা স্পষ্ট নয়।
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘আমরা এর নিন্দা জানাই। সংঘর্ষের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা লড়াইয়ের ক্ষেত্রের বাইরে ঘটেছে...আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে বল প্রয়োগ করা হয়েছে।’
ফুমথাম আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষেই রয়েছি এবং আলোচনা হওয়া উচিত। কিন্তু যা হয়েছে, তা একরকম উসকানি। আর আমরা আত্মরক্ষার্থে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়েছি।’
![]() |
কম্বোডিয়ার সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর থাইল্যান্ডের চাচোয়েংসাও প্রদেশে সড়কে থাই সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান | ছবি: এএফপি |
‘পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসন’
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন সাংবাদিকদের জানান, সুরিন প্রদেশে একটি হাসপাতালে গোলাবর্ষণ হয়েছে। তিনি একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বিবেচনার দাবি জানান।
কম্বোডিয়ার সরকার, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য দেয়নি এবং কতজন মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা–ও জানায়নি।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে থাকা পাকিস্তানের কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘অভিযোগহীন ও পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসনের’ অভিযোগ এনে এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত বৈঠক ডাকারও অনুরোধ জানান।
এদিকে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় সীমান্তবর্তী থাই গ্রামগুলো থেকে শিশু, বয়স্করাসহ অনেক মানুষ বালির বস্তা ও টায়ারে ঘেরা কংক্রিটের বাংকারে আশ্রয় নিয়েছেন।