শিশু অধিকার ইশতেহারে স্বাক্ষর করল বিএনপি-জামায়াতসহ ১২ দল
| ‘শিশু অধিকার ইশতেহার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাউয়ার্স। ১ ডিসেম্বর, ২০২৫; রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ‘শিশু অধিকার ইশতেহারে’ থাকা ১০টি অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছে দেশের ১২টি রাজনৈতিক দল।
দলগুলো হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণফোরাম, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
আজ সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিসেফ আয়োজিত ‘শিশু অধিকার ইশতেহার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দলগুলোর নেতারা এতে স্বাক্ষর করেন।
ইশতেহারে থাকা ১০টি অঙ্গীকার হলো সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা, শিশুর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ, মানসম্মত অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, শিশুদের জন্য সহনশীল বাংলাদেশ, নিরাপদ পানি ও উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষা, জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা, শিশু-সংবেদনশীল বাজেট এবং শিশু ও তরুণদের বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন দলের নেতারা আছেন। আমি বিশ্বাস করি, শিশুরা এসব কিছুর ঊর্ধ্বে। সে কারণে আমরা সার্বিকভাবে শিশুদের কল্যাণে কথা বলতে চাই, প্রতিজ্ঞা করতে চাই। আমাদের আজকের শিশুরা যারা আর কিছুদিন পর এ জাতিকে পরিচালিত করবে, আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, শিশুদের কনভেনশনের কথা ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যায়, বাংলাদেশ আরও ১০ বছর আগে ১৯৭৯ সালে শিশু অধিকার নিয়ে কথা বলেছে।
১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চিলড্রেন (সিআরসি) প্রণয়ন করে। তাতে শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও বিকাশকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মঈন খান বলেন, একই সময়ে শিশুদের কল্যাণে কাজ করার জন্য একটি মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ অগ্রগামী দেশ হিসেবে সিআরসি স্বাক্ষর করেছিল। আমাদের সীমিত সম্পদের কারণে, সক্ষমতার অভাবে শিশুদের জন্য অনেক কিছু করা হয়নি। কিন্তু আমরা করতে চাইনি, এটা বলা ঠিক হবে না।
ইউনিসেফ শিশুদের যে ১০টি অধিকার ‘শিশু অধিকার ইশতেহার’–এ রেখেছে, সেগুলো বাস্তবায়নে সীমিত সম্পদ বড় চ্যালেঞ্জ মনে করেন এই রাজনীতিবিদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন ইউনিসেফের ইয়ুথ অ্যাডভোকেট গার্গী তনুশ্রী পাল। তিনি শিশু অধিকারকে নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। পরে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, আজকের দিনটা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ঐতিহাসিক সময়। শিশুরা চায় সুরক্ষা, শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টিতে অধিকার। পরবর্তী সরকারের কাছে শিশুরা তাদের চাওয়া স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। রাজনৈতিক দলগুলো শিশু অধিকারের ইশতেহারে স্বাক্ষর করে সংহতি জানিয়েছে। এটা মাত্র শুরু। আসল পরীক্ষা হবে এটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক সংগঠন ও ভাবনার সংগঠন—সবাইকে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে ভূমিকা নিতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনিরুদ্দিন পাপ্পু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিশুর অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লজ্জাজনক। জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে ১৩৩ শিশু জীবন দিয়েছে। তাদের ত্যাগের প্রতি সম্মান রেখে শিশুদের জন্য আজকের যে ইশতেহার, সেটার বাস্তবায়ন জরুরি।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা রাষ্ট্র গড়েছি, যে রাষ্ট্র এখনো শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানির মতো মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। ৫৪ বছর পর এসে আমাদের অঙ্গীকার করতে হচ্ছে। শিশুদের ইশতেহারে যে ১০টি অঙ্গীকার আছে, আমরা তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা বলেন, গ্রামে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, গ্রামের শিশুদের পুষ্টিহীনতার অবস্থা খুব খারাপ। শিশুর অধিকার জন্মের আগেই শুরু হয়। অভিভাবকের স্বাস্থ্য ও সচেতনতা এ ক্ষেত্রে খুব প্রয়োজন। শিশুশ্রম বন্ধ, বাল্যবিবাহ রোধ, মানসম্মত শিক্ষা ও জলবায়ু–সহনশীল অবকাঠামো দরকার।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্কাফি রতন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার ছিল। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে, কিন্তু সেই অঙ্গীকার এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ শিশুদের কল্যাণে দলের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। আরও কিছু করার থাকলে তা করার কথা জানান।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু অধিকারের ১০টি অঙ্গীকার যুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা নুসরাত শবনম তূর্ণা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্যের নেতারা। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কাস এডুকেশনের সদস্যসচিব নাইমুল আহসান জুয়েল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন