সবুজ হোসেন নওগাঁ
![]() |
বৃষ্টিতে জলমগ্ন সিও অফিস থেকে চকবাড়িয়ার সড়ক। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
তিন দশকের বেশি সময় আগে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হলেও নওগাঁ শহরের চিত্র এখনো সেই পুরোনো-এক অবহেলিত মফস্বল। রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা, জলাবদ্ধতা, অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর নাগরিক সেবার ঘাটতিতে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শহরের দুই লাখের বেশি মানুষ।
নওগাঁ শহরের সিও অফিস থেকে চকবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে টানা ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেই হাঁটুসমান পানি জমে যায়। সেই পানি নামতে লেগে যায় প্রায় ১০ দিন। নেই কোনো পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। সড়কে জমে থাকা আবর্জনা ও পয়ঃবর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয় ও চর্মরোগের মতো পানিবাহিত রোগ। শিশুরাই এর প্রধান শিকার।
নওগাঁ পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৩ সালে গঠিত এ পৌরসভা ১৯৮০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি ও ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। ৩৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কিলোমিটার এখনো কাঁচা। আর পাকা ও আধা-পাকা রাস্তার ৮০ শতাংশই চলাচলের অনুপযোগী, খানাখন্দে ভরা।
চকবাড়িয়া, দুর্গাপুর, দয়ালের মোড়, তাজের মোড়, কালীতলা, পালপাড়া, গোস্তহাটি মোড়, উকিলপাড়াসহ শহরের প্রায় সব এলাকায় একই অবস্থা।
চকবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘এই রাস্তা ১৫ বছরেও ঠিক হলো না। বর্ষা এলেই হাঁটাচলা বন্ধ। শহরটার কোনো অবয়বই নেই।’
সিও অফিস এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘অবৈধ তিন চাকার অটোরিকশায় শহরের রাস্তাগুলো প্রায় বন্ধ। বাচ্চাদের স্কুলে সময়মতো পৌঁছানো যায় না।’
শুধু রাস্তাঘাট নয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও শোচনীয়। প্রশিকা বিদ্যানিকেতনের শিক্ষিকা মৌসুমী বলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। শহরটা যেন মশা-মাছির দখলে। থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে।’
নাগরিকদের ভাষ্য, কাগজে-কলমে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বাস্তবে যেন ফেলে রাখা এক জনপদ।
অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এই শহরের কোনো অভিভাবক আছে বলে মনে হয় না। দুর্গন্ধ, যানজট, ময়লা আর পানিতে আমরা বন্দি।’
তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘তাজের মোড়-কালীতলা, গোস্তহাটি-শাহী মসজিদ এবং নাপিতপাড়া রোড—এই তিনটি সড়ক সংস্কারে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাকি সড়কের জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমস্যাগুলো বহু পুরোনো। এক দিনে সব সমাধান সম্ভব নয়। তবে আমরা পরিকল্পিত উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছি।’
অবাক করার বিষয় হলো, এমন দুর্দশার মাঝেই নাগরিক সেবা উন্নয়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই হোল্ডিং ট্যাক্স ও পানি বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌর প্রশাসক টি.এম.এ. মমিন বলেন, ‘২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন হারে রাজস্ব আদায় শুরু হবে। উন্নয়নের কাজও চলছে।’