পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক
![]() |
১৭০তম সাঁওতাল হুল দিবসে কাঁকনহাটে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের যাত্রা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
‘যেখানে অধিকার বঞ্চনা, সেখানেই হুল’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৭০তম সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা সিসিবিভিও, রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটি ও স্থানীয় গ্রাম সংগঠনগুলো।
সকাল সাড়ে নয়টায় সিসিবিভিও শাখা কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। এতে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অংশ নেন। শোভাযাত্রাটি কাঁকনহাট বাজার প্রদক্ষিণ করে পৌরসভার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এরপর শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ইথার। পাশাপাশি বক্তব্য দেন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির নেতা সুমিতা হাঁসদা, মলিন মার্ডী, বাপ্পি মার্ডী, মুকুল সরেন ও রঞ্জিত রায়।
বক্তারা জানান, ‘১৭০ বছর ধরে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস তাদের কাছে অধিকার ও মর্যাদা অর্জনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি। তবুও তারা এখনো নানা ধরনের শোষণ ও বঞ্চনার মুখোমুখি। ভূমির অধিকার পায়নি এবং সমতল অঞ্চলের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতিও অর্জন হয়নি। তারা নিজেদের স্বীকৃতি ও অধিকারের দাবি জানায়।’
সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন শুরু হওয়া এই বিদ্রোহ ছিল উপমহাদেশের প্রথম সশস্ত্র গণ-আন্দোলন। ব্রিটিশ শাসন, দেশীয় দালাল জমিদার, সুদখোর ও পুলিশ বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সেদিন সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব নামের চার ভাই নেতৃত্ব দেন। তাঁদের সঙ্গে দুই বোন ফুলোমনি ও ঝালোমনি মুরমু ছিলেন। প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা প্রাণ হারান এই লড়াইয়ে। পরে চার নেতা নিহত হওয়ার পর বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
বক্তারা উল্লেখ করেন, এই আত্মত্যাগ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে। তাই অনেক সাঁওতাল দিনটিকে ‘সিধু-কানু দিবস’ হিসেবেও পালন করেন। বিদ্রোহ আজও তাদের জন্য পথপ্রদর্শক, যা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রেরণা জোগায়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিসিবিভিওর প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা সৌমিক ডুমরী ও সমাজ সংগঠক মানিক এক্কা। পুরো আয়োজনের তত্ত্বাবধান করেন ঊর্ধ্বতন মাঠ কর্মকর্তা নিরাবুল ইসলাম।