প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা
![]() |
চুয়াডাঙ্গায় পাউবোর এক কর্মচারীকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও ট্রেন আটকে বিক্ষোভ। আজ রোববার সকালে জীবননগর উপজেলার উথলী রেলস্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মচারী আবদুল গাফ্ফারকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। আজ রোববার সকালে উপজেলার উথলী রেলওয়ে স্টেশনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
উথলী ইউনিয়নবাসী ও শোকাহত পরিবারের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। এতে নিহত গাফ্ফারের ১১ মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার, বাবা জিন্নাত আলী, মা তহমিনা খাতুনসহ হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই সেনাবাহিনী ও থানা-পুলিশের সদস্য উথলী রেলস্টেশন এলাকায় ছিলেন।
কর্মসূচি চলাকালে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী ৭১৫ কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন উথলী রেলস্টেশনে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা প্রায় ২০ মিনিট ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা গাফ্ফার হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি টিটিই লালন চক্রবর্তী, অ্যাটেনডেন্ট মিলন ও সোহাগ মিয়া এবং জিআরপি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পারভেজ ও কনস্টেবল কাদেরের শাস্তির দাবি জানান।
উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও নাগরিক সংগঠন জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিটি হয়। এতে জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য মাওলানা মো. মহিউদ্দিন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ফয়সাল মাহাতাব, নিহত ব্যক্তির বাবা জিন্নাত আলী, মা তহমিনা খাতুন বিউটি ও স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, গাফ্ফার বরাবরই প্রতিবাদী মানুষ। গত ২১ মে বিকেলে তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে উথলীর উদ্দেশে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন। ওই দিন ট্রেনের টিটিই, অ্যাটেনডেন্ট ও জিআরপি পুলিশ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলেন। গাফ্ফার প্রতিবাদ করলে তাঁকে জোর করে পাশের বগিতে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। অন্য যাত্রীরা কারণ জানতে চাইলে তাঁরা গাফ্ফারকে ছিনতাইকারী বলে পরিচয় দেন ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান। কয়েক মিনিটের মাথায় জয়রামপুর স্টেশন এলাকায় তাঁকে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। সহযাত্রীরা বাড়িতে এসে ঘটনার বর্ণনা দিলে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গাফ্ফারের বাবা বাদী হয়ে রেলওয়ে ও জিআরপি পুলিশের পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ২৭ মে জীবননগর আমলি আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়িত্ব দেন।
গাফ্ফারের মা তহমিনা খাতুনের অভিযোগ, মামলার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও ডিবি এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি। অথচ মামলা করায় জিআরপি পুলিশের কর্মকর্তারা ফোন দিয়ে তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন।
জীবননগর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাফ্ফার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে হাজারো মানুষ আজ সমবেত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মামলা নিয়ে কোনো গড়িমসি করলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জিআরপি পুলিশের চুয়াডাঙ্গা ফাঁড়ির এসআই জগদীশ চন্দ্র বলেন, ২১ মে বিকেলে জয়রামপুর থেকে গাফ্ফার লাশ উদ্ধারের পর পোড়াদহ রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। ওই দিন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কোনো অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত দিয়ে লাশ নিয়েছিলেন। পরে ২৭ তারিখে পাঁচজনের নামে মামলার বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বলেন, মামলার আসামিরা বিষয়টি জেনেছেন। আইনগতভাবেই তা নিষ্পত্তি করবেন।