নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইশরাক হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আন্দোলন ঘিরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ ও ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আসিফ মাহমুদ ঢাকার হাজারো ভোটারকে অবমাননা করেছেন, সেজন্য তাঁর নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইশরাক।

তিনি অভিযোগ করেন, এক বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, ইশরাকের আন্দোলন বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে হয়েছে এবং সেই নেতা অর্থ ও সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছেন। ইশরাকের ভাষায়, 'এই বক্তব্য শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, বরং ঢাকাবাসীর সংগ্রামকেই তাচ্ছিল্য করে দেওয়া হয়েছে।' 

তিনি বলেন, 'ঝড়, বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে যারা আন্দোলন করেছে, তাদেরকে একটি বাক্য দিয়ে পশুর মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসিফ মাহমুদের নাগরিকদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।' 

আসিফ মাহমুদের আচরণকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, 'তিনি নিজেকে সবার ওপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় করেছেন।' 

সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচির নেতৃত্বে রয়েছেন ইশরাক। কিছুদিন ঈদের ছুটির পর আবারও আন্দোলনে সক্রিয় হন তাঁরা। এ সময় নগর ভবনের প্রবেশপথে তালা লাগিয়ে কর্মসূচি চলতে থাকে, যার ফলে সেবামূলক কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে।

এরপর ইশরাক নিজেই ঘোষণা দেন, জনদুর্ভোগ লাঘবে তিনি নিজ উদ্যোগে করপোরেশনের জরুরি সেবা চালু রাখবেন। জন্ম নিবন্ধনসহ নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সেবা সচল থাকবে, তবে অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

এই প্রেক্ষাপটেই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মন্তব্য করেন, মেয়াদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ইশরাক আর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারবেন না। এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইশরাক বলেন, 'এই বক্তব্য একদিকে যেমন সত্যবিকৃত, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের আদেশেরও ব্যত্যয়।' 

তিনি আরও বলেন, 'আসিফ বলছেন, আমাকে কুমিল্লার এক বিএনপি নেতা প্ররোচিত করেছেন এবং তার কাছে নাকি প্রমাণ আছে। আমি তাকে আহ্বান জানাচ্ছি—সেই প্রমাণ জাতির সামনে উপস্থাপন করুন। না হলে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।' 

আসিফ মাহমুদের আরও বক্তব্যের জবাবে ইশরাক বলেন, 'তিনি বলেছেন, বিএনপির একটি অংশ সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ায় না আসায় আমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বক্তব্য ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলকে অপমান করার নামান্তর।' 

আদালতের রায়ের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কথিত ‘আলোচনা ও সমঝোতার’ প্রসঙ্গ টেনে ইশরাক বলেন, 'আমি আমার দলের প্রধান ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আদালত বিষয়ক কোনো আলোচনা করতে কাউকে সম্মতি দেইনি। তাহলে কারা কার সঙ্গে সমঝোতা করেছে, তা জাতিকে জানাতে হবে।'

সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে প্রশাসকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে আসিফের মন্তব্যের প্রসঙ্গে ইশরাক বলেন, 'আমি অহংকার করে নয়, সম্মানের জায়গা থেকে সেই প্রস্তাব বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছি। একজন বৈধ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে এ ধরনের প্রস্তাব অপমানজনক।' 

এ সময় তিনি বলেন, 'সরকার যদি কোনো নির্বাচন বৈধ না বলে, তাহলে সেটা বাস্তবায়ন কবে এবং কীভাবে হবে? সুপ্রিম কোর্ট যে গেজেট বৈধ ঘোষণা করেছে, সেটাকেও যদি সরকার মানে না, তবে সেটা আদালত অবমাননার শামিল নয় কি?' 

নগর ভবনে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া ছাড়াই এনসিপি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওয়ার্ড সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইশরাক। তিনি বলেন, 'এই অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে সেই নিয়োগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।' 

এদিকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলে ইশরাক দাবি করেন, অভিযুক্ত প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া রুবেল অতীতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং উপদেষ্টা আসিফের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, 'রুবেল কখনো আন্দোলনে অংশ নেননি, বরং বিভিন্নভাবে বিরোধিতা করে গেছেন। তদবির করে কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন।' 

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'আন্দোলনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিহিংসামূলক সিদ্ধান্ত নিলে সেটি রাজপথে গড়াবে।' 

গত ২৩ জুন নগর ভবনের কর্মবিরতি প্রত্যাহার প্রসঙ্গে ইশরাক বলেন, 'এটি আন্দোলনের দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমরা শুধুমাত্র জনদুর্ভোগ কমাতে জরুরি সেবা চালু রেখেছি।' 

তিনি বলেন, 'ঈদের পর করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন সেবামূলক কার্যক্রম শুরু করতে উদ্যোগী হন, তখন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব তাদের তা করতে নিষেধ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, জনসাধারণকে সেবা থেকে বঞ্চিত করে আন্দোলনকারীদের দায়ী করা।' 

সবশেষে ইশরাক জানান, ভবিষ্যতে নির্ধারিত দিনে শান্তিপূর্ণ প্রতীকী কর্মসূচি চলবে, তবে জনসাধারণের কোনো কাজে বাধা সৃষ্টি করা হবে না।