প্রতিনিধি চট্টগ্রাম
![]() |
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও তাদের ‘অস্তিত্ব বিপন্ন’ হয়ে পড়েছে।
শনিবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে বাসুদেব ধর বলেন, 'গতকাল একটি দুর্গা মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা নিয়ম মেনেই সরিয়ে নেওয়া হত, আমাদের আপত্তি হতো না। কিন্তু দুর্গা মন্দির অপসারণের পদ্ধতি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। পবিত্র মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সম্মান দেখানো হয়নি। এ যেন কোন বাংলাদেশে আমরা আছি।'
তিনি আরও বলেন, '৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আমরা এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলাম যেখানে বৈষম্য ও নির্যাতন থাকবে না। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল জয়ী। তিনি শপথ গ্রহণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। এখানে কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা হবে না। পূজা হবে নিরাপদে, যেখানে পুলিশের উপস্থিতি লাগবে না। আমরা সেই বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম।'
বাসুদেব ধর অভিযোগ করেন, 'কিন্তু পরিবর্তনের পরও ৫৪ বছরের বৈষম্য আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়নি। আমরা এখনো রাস্তায়। প্রতিবাদ বাড়ছে, আমাদের অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যা বলেছিলেন, তা বাস্তবে হচ্ছে না। আমরা অনেক কমিশনে জায়গা পাইনি, আমাদের মতামত শোনা হয়নি। দেশের দুই কোটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অধিকার কতটা সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছে তা জানি না।'
তিনি বলেন, 'জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংশোধন কমিশনের সভাপতি আলী রিয়াজ আমাকে বারবার ডাক দিয়েও আমাদের সংগঠনের পক্ষে আসতে বলেন। কিন্তু আমরা জানতে পারিনি নতুন সংবিধানে আমাদের অবস্থান কী হবে। ‘বহুত্ববাদ’ কথা বলা হলেও ধর্মীয় বৈষম্য রয়ে গেছে।'
বাসুদেব ধর আরও বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে, সর্বস্ব উৎসর্গ করেছে। অথচ আজ তারা নিপীড়িত। দেশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় যারা শিরোপা পেয়েছে, তারা আজ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। এ অবস্থা চলতে পারে না।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টার সরকারের ভেতর এমন শক্তি আছে যারা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে। তারা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাষ্ট্রের অংশ করতে চায়। যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে।'
বাসুদেব ধর দেশের সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, 'দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সেনাবাহিনী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অভয়নগরেও তারা ২২টি নিঃস্ব পরিবারের জন্য বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন করেছে, বাড়িঘর করেছেন, খাবার দিয়েছে। আশা করি তারা আরও সক্রিয় হবে।'
তিনি উল্লেখ করেন, 'অভয়নগরে ২২টি হিন্দু পরিবারকে সম্পূর্ণ নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়, তাদের ওপর হামলা হয়েছে। লালমনিরহাটে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিতা-পুত্রকে হয়রানি করা হয়েছে, যা মিথ্যা অজুহাত।'
সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ বক্তব্য রাখেন।