[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রায়গঞ্জে জমজমাট জামাইবরণ মেলা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ

জামাইবরণ মেলায় শিশুদের নানা খেলনার দোকান বসেছে। রোববার রায়গঞ্জের নিমগাছী বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার নিমগাছী বাজারে প্রতিবছরের মতো ঐতিহ্যবাহী বাঁশের মেলা বা জামাইবরণ মেলা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে মাদারের মেলাও বলেন। কয়েক শ বছরের পুরোনো এ মেলা জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় রোববার শুরু হয়। চলে পরদিন সোমবার পর্যন্ত। মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের আসা–যাওয়া চলে সপ্তাহজুড়ে।

রোববার বিকেলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় আসা মানুষ কেনাকাটায় ব্যস্ত। মেলা উপলক্ষে এলাকা সরগরম হয়ে উঠেছে।

মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নের দোকান বসেছে। রোববার রায়গঞ্জের নিমগাছী বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাজার থেকে একটু দূরে দক্ষিণে বিশ্বনাথ মাহাতোর বাড়ি। মেলা উপলক্ষে তাঁর দুই মেয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ী ছোট জামাতা কার্তিক চন্দ্র এসেছেন প্রথমবারের মতো। তিনি বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ি থেকে পাওয়া পুরবি (বকশিশ) নিয়ে মেলায় যেতে হবে। মেলা থেকে নানা রকমের মিষ্টি ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়।’

মেলা ঘিরে গ্রামে গ্রামে চলে আনন্দ-উৎসব। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসেন। বিশেষ করে জামাই-মেয়েকে নিয়ে আসা হয় প্রতিটি বাড়িতে। শ্বশুরবাড়ি থেকে জামাতাকে নানা উপহার ও নগদ টাকা উপঢৌকন দেওয়া হয়। জামাতা মেলায় গিয়ে মাছ আর মিষ্টি কিনে আনেন শ্বশুরবাড়িতে। এ জন্য কেউ কেউ মেলার নাম দিয়েছেন জামাইবরণ মেলা।

মাহাতোদের কুড়মালি ভাষার লেখক ও গবেষক উজ্জ্বল কুমার মাহাতোর লেখা উপন্যাস ‘কারাম’-এ মেলার সুন্দর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র গনদিয়া মাহাতো ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এ মেলায় যায়। বাবার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে পুতুল দেখার জন্য গনদিয়া পেছনে পড়ে এবং হারিয়ে যায়। পরে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়। শেষে মেয়েকে খুঁজে পান বাবা। পরে পছন্দের জিনিসগুলো কিনে গনদিয়া বাবার হাত ধরে বাড়িতে ফেরে।

মেলা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁদের জন্য কেনা হচ্ছে মিষ্টি। রোববার রায়গঞ্জের নিমগাছী বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

 যশোরের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খ ম রেজাউল করিম তাঁর রায়গঞ্জ: ইতিহাস সমাজ ও সংস্কৃতি বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ মেলা হয়ে আসছে বলে কথিত আছে। একটি বিশেষ বাঁশকে কেন্দ্র করে মেলা হয়। অনেক আগে থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ওঁরাও, মাহাতোসহ নানা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বাঁশকে দেবতা মনে করে পূজা করতেন। মেলা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকে গ্রামে গ্রামে চলে মাদারের বাঁশের মেলা। একটি বড় বাঁশকে লাল কাপড়ে মুড়িয়ে ও নানা রঙে সাজিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল বেরিয়ে পড়ে। ঢাকঢোল বাজিয়ে গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লাঠিখেলা দেখায়।

মেলায় বসা শিশুদের খেলনার দোকান থেকে নিজের সন্তানের জন্য খেলনা কিনছেন এক নারী। রোববার রায়গঞ্জের নিমগাছী বাজারে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক ও কবি আবদুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, মেলার কয়েক দিন আগে থেকে বাঁশ কাঁধে নিয়ে আশপাশের গ্রামে ঢাকঢোল বাজিয়ে একদল লোক সাহায্য প্রার্থনা করতেন। তাঁরা ছুরি, লাঠি দিয়ে বিভিন্ন কসরত প্রদর্শন করতেন। লোকে চাল, টাকাপয়সা ইত্যাদি দিয়ে তাঁদের সাহায্য করতেন। কালের বিবর্তনে বড় বাঁশ তথা মাদার বাঁশ উত্তোলন বন্ধ হলেও কসরত দেখিয়ে সাহায্য তোলা আজও চলছে।

তাড়াশের দেশীগ্রাম ইউনিয়নের দত্তবাড়ি গ্রামের নীহাররঞ্জন সরকার বলেন, মেলা ঘিরে এলাকা সরগরম হয়ে উঠেছে। সোমবার বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়স্বজন আসবেন। কাঞ্চনেশ্বর গ্রামের জয়দেব চন্দ্র মাহাতো বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই শেষে এ মেলা হয় বলে আনন্দের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন