প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

১৭ মে বায়েজিদ এলাকার একটি কারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া ইউনিফর্ম | ছবি: পুলিশের সৌজন্যে

চট্টগ্রাম নগরের একটি গুদাম থেকে আরও ১১ হাজার ৭৮৫টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করা হয়েছে। সোমবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়াহাট এলাকার একটি গুদাম থেকে এগুলো জব্দ করেছে থানা–পুলিশ। পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম।

তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নগর পুলিশের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কেউ রাজি হচ্ছেন না বক্তব্য দিতে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন।’ পরে নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলামকে কল করা হলে তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম কিছু জানেন না বলে জানান। তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।

এর আগে ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মংহলাসিন মারমা (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।

পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত মার্চে পোশাকগুলো কারখানাটিতে ফরমাশ দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তাঁরা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ নেন। চলতি মাসে পোশাকগুলো সরবরাহের কথা ছিল।

ফেসবুকে পেজ খুলে দুই–তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার।

পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।