প্রতিনিধি বরিশাল
![]() |
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন–১–এর নিচতলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন–১–এর নিচতলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা ‘শাটডাউন’–এর হুঁশিয়ারি দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে ‘যে ভিসিরে পাই না, সেই ভিসিরে চাই না’, ‘দফা এক, দাবি এক—স্বৈরাচার ভিসির পদত্যাগ’, ‘নয় মাস চলে গেল, উন্নয়নের কী হলো?’, ‘কথায় কথায় মামলা, এবার গদি সামলা’ এমন নানা স্লোগান দেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস ঘুরে এসে প্রশাসনিক ভবনের নিচে শেষ হয়।
এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ঢালী বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাস পার হলেও কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বারবার দাবি জানানোর পরও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা মনে করি, তিনি এ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন সপ্তাহ ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কিন্তু উপাচার্য বা প্রশাসনের কেউ আলোচনায় বসার প্রয়োজন মনে করেননি। এই অবহেলাই প্রমাণ করে তিনি অযোগ্য এবং আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
কর্মসূচিতে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম, এস এম ওয়াহিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান, সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আজমাইন সাকিব, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় পক্ষপাতমূলকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২২ দফা দাবির বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না করা, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যাওয়া শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হকের চিকিৎসায় সহায়তার আবেদনকে অবহেলা করা এবং আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। এ জন্য তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবির আন্দোলন করছেন।
![]() |
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আন্দোলনকারীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা শাটডাউন করা হবে।
এর আগে রোববার উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এদিন দুপুরে উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানান। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।
২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এই সিদ্ধান্ত আসার পরই গতকাল দুপুরে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।