প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
![]() |
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে বাড়ির খড়ের পালা, জ্বালানির স্তূপ ও গোয়ালঘর পুড়ে গেছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আগেও বাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারা হয়েছে। ঘরের জানালা-দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে মলমূত্র। সর্বশেষ মধ্যরাতে বাড়িটিতে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রঘুনাথপুর গ্রামের।
ওই গ্রামে নির্মল হালদারের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে বাড়ির প্রাচীরের মধ্যে থাকা খড়ের পালা, জ্বালানির স্তূপ ও গোয়ালঘর পুড়ে গেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই তাঁদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনায় নির্মল হালদারের বড় ছেলে নাট্যশিল্পী প্রশান্ত হালদার গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে প্রশান্ত ও তাঁর বোন সাংবাদিক শ্রাবণী রাখী ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন। এ ছাড়া গতকাল থানা-পুলিশ ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেদারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
প্রশান্ত হালদার লিখিত অভিযোগে জানান, ‘ইতিপূর্বে অজ্ঞাতনামা কে বা কারা রাতের বেলায় আমাদের রান্নাঘরে জানালায় তিন–চারবার মানুষের মল মাখিয়ে রেখে যায়। এ ছাড়া একাধিকবার আমাদের টিনের ঘরের চালে ও দোতলা ঘর লক্ষ্য করে ইট ও ঢিল ছোড়ে। বিষয়টি নিয়ে আমরা স্থানীয়ভাবে আলোচনা করি। এমতাবস্থায় আমাদের সন্দেহ হয় যে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি কে বা কারা ২২ মে রাতে আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিট হতে রাত ১টায় মধ্যে অসৎ উদ্দেশ্যে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।’
প্রশান্ত হালদার ঢাকার নাট্যদল অনুস্বর এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। প্রায় চার দশক ধরে তিনি নাট্যচর্চায় যুক্ত আছেন। নাট্যকার ও অভিনেতা হিসেবেও তাঁর পরিচিতি আছে। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তাঁদের বাড়িতে আগুন লাগে। মূল বাসভবন দোতলার পেছনে প্রাচীরসংলগ্ন একটি খোলা টিনের চালায় বিচালি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর সঙ্গে লাগোয়া খড়ের গাদা, টিনশেডের স্টোররুম ও গোয়ালঘরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আজ রোববার গিয়ে দেখা যায়, সরেজমিনে আজ দেখা যায়, বাড়িতে সুনসান নীরবতা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রশান্ত হালদার ও শ্রাবণী রাখী ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা দুজন সঙ্গে নিয়ে বাড়িটি ঘুরে দেখান। মূল বাড়ির দ্বিতল ভবনটির পেছনে ছিল খড়ের গাদা। সেখানে আগুনে পোড়া খড় আর ছাই পড়ে আছে। এখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে তাঁরা জানান। এর পশ্চিম দিকে একটি টিনের ঘরে রাখা ছিল জ্বালানি কাঠ। সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পশ্চিম পাশে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর গোয়ালঘর আগুনে পুড়ে গেছে। মূল ভবনের গায়ে থাকা পানির পাইপ আগুনে নষ্ট হয়েছে।
![]() |
থানা-পুলিশের সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শ্রাবণী রাখী বলেন, তাঁরা ভাইবোন ঢাকায় থাকেন। গ্রামের বাড়িতে ছয়জন থাকেন। বৃদ্ধ বাবা-কাকা ছাড়া ছোট একটি ভাই থাকেন বাড়িতে। বাকিরা নারী সদস্য। অসৎ কোনো উদ্দেশ্যে কেউ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিকভাবে এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আইনি সহায়তা পেতে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।