কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসংকট, সেকমো দিয়ে চলে সেবা
প্রতিনিধি ঝিনাইদহ
![]() |
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসংকট। সেকমো দিয়ে চলছে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বুধবার বেলা ১১টা। ঝিনাইদহের ৫০ শয্যার কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের কক্ষগুলোতে তখন লম্বা লাইন। শিশু-বৃদ্ধ সব বয়সের রোগী এসেছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু কোনো চিকিৎসক নেই। চারটি কক্ষে চারজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) রোগী দেখছেন। পাশের জরুরি বিভাগও সামলাচ্ছেন গোলাম মারুফ নামের আরেকজন সেকমো।
রোগী ও তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে তাঁদের চিকিৎসকসংকট চলছে। ১৯ জন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আছেন মাত্র ৫ জন। যাঁদের মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন অবেদনবিদ। অন্যরা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর ভর্তি রোগী দেখায় ব্যস্ত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা গঠিত। এখানে দেড় লাখের বেশি মানুষের বাস। ভৌগোলিক দিক দিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পাঁচটি উপজেলার মাঝে অবস্থিত। যশোরের চৌগাছা, ঝিনাইদহের সদর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা সদরের অনেকে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে রোগীর চাপ থাকে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড় বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে আসেন ৬০০ আর ভর্তি থাকেন ৬৫ রোগী। এই বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে, প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগের ৬টি কক্ষে প্রতিদিন রোগী দেখা হয়। ১০১ নম্বর কক্ষে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও ডেঙ্গু রোগী, ১০৩ নম্বরে গাইনি সেবা, ১০৮ নম্বরে প্রসূতিসেবা, ১০৪ নম্বর কক্ষে শিশু রোগীদের সেবা, ১০৯ নম্বর কক্ষে অসংক্রামক রোগ এবং ১০৫ নম্বর কক্ষে টেলিফোনে রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসকসংকটের কারণে এ নিয়ম মানা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন সকালে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের কক্ষ ভাগ করে দেওয়া হয়। তাঁরা যখন যে রোগী পান, তাঁকেই ব্যবস্থাপত্র দেন।
বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১০৮ নম্বর কক্ষে সুমাইয়া খাতুন চিকিৎসা দিচ্ছেন। ১০৯ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা দিচ্ছেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ, ১০৩ নম্বরে আছেন শাহনাজ পারভিন এবং ১০৪ নম্বরে রোগী দেখেন মাহফুজ ইসলাম। তাঁরা সবাই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মাসুদ ও মাহফুজ ইসলাম নিয়োগপ্রাপ্ত নন; হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ধার করে কাজ চালাচ্ছে।
পাশের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন গোলাম মারুফ। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় আসা এক রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। তিনি বলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এখন রাউন্ডে আছেন। তাই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শ্রীরামপুর গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৪৫) বলেন, তিনি ডায়াবেটিসের রোগী। এখানেই সেবা নেন।
জ্বর নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন কোটচাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড পাড়ার হোসেন আলীর স্ত্রী রহিমা খাতুন। তিনি সুমাইয়া খাতুনকে দেখিয়েছেন। তিনি মেডিকেল অফিসার নন জেনেও এসেছেন। কারণ, বেশি টাকা খরচ করে বাইরে চিকিৎসক দেখানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
সাব্দালপুর থেকে এসেছেন ইমরান হোসেনের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন। তিনিও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারকে দেখান।
এই তিন রোগীই আশা করেন, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক থাকবেন। তাঁদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তাঁরা সুস্থ হবেন।
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমানুল্লাহ আল মাসুম বলেন, তাঁদের কাছে বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতাল ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বহির্বিভাগে রোগীর চাপ, ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেশি; তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে সেকমো দিয়ে রোগী দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসাসেবা ধরে রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এমনটা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন