প্রতিনিধি দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম

দিনাজপুরে সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে নতুন করে ২২ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর মধ্যে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ১৩ জনকে এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ৯ জনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভোররাতের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। এ সময় সীমান্তে টহলরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাঁদের আটক করেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ ও ১৬ জন নারী।

বিরল সীমান্তে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ২ জন পুরুষ। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত একটায় উপজেলার এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্প সংলগ্ন ধর্মজৈন কারুলিয়াপাড়া এলাকায় তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তাঁদের আটক করে এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্পে নিয়ে আসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ বিরলের কারুলিয়াপাড়া গ্রামে এসে স্থানীয় লোকজনকে ডেকে তোলেন। এ সময় তাঁরা খাবার ও পানি চান। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থও ছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের খাবার ও পানি সরবরাহ করেন এবং এ ব্যাপারে বিজিবি সদস্যদের জানান।

দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মঈন হাসান বলেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ১৩ জনকে পুশ ইন করা হয়েছে। এ সময় আমাদের টহল দলের সদস্যরা তাঁদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। বর্তমানে আটক ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই–বাছাইয়ের কাজ চলমান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত এক মাসে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আটক ব্যক্তিরা বাংলাদেশি নাগরিক, এটি নিশ্চিত হওয়া গেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মঈন হাসান আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে পুশ ইনের সংখ্যা বাড়িয়েছে। আমাদের এলাকাতেও পুশ ইনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। পুশ ইন প্রতিরোধে বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। স্থানীয় জনগণও আমাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে।’

এদিকে ফুলবাড়ী সীমান্তে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ। আজ ভোররাতে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৪৩–এর পাশ দিয়ে তাঁদের ঠেলে পাঠানো হয়। পরে সীমানা পিলারের ৮০০ গজ দূরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাঁদের আটক করে পুলিশে দেয় বিজিবি।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, আটক ব্যক্তিদের পরিচয় বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁদের ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ছালাম জানান, আজ বেলা দুইটায় সীমান্তে ঠেলে পাঠানো নারী-শিশুসহ ৯ বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

এই ৯ বাংলাদেশি হলেন ফুলবাড়ী উপজেলার বজরের খামার এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে বাহাদুর ইসলাম, আবদুল হকের মেয়ে আমিরন বেগম, নচিয়তুল্লাহর মেয়ে মিনা বেগম, ওবায়দুল ইসলামের মেয়ে রুমি খাতুন, মোজাম্মেল হকের ছেলে আপেল মিয়া, আপেল মিয়ার ছেলে হৃদয় ইসলাম, আমিনুল ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদ, জয়নাল আবেদীনের মেয়ে জুই আক্তার ও মীম আক্তার।