নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান | ফাইল ছবি |
মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। তবে তাঁদের হিসাবে উল্লিখিত গুমের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হবে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের অধিকাংশ এখনো নিখোঁজ, অনেকেরই মৃতদেহ পাওয়া গেছে, আবার অনেক দিন পর কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এটি বিগত আওয়ামী শাসনামলের একটি বর্বর দুঃশাসনের নমুনা।
প্রতিবছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। এই সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল সোমবার বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন। আজ মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আন্তর্জাতিক এই সপ্তাহ উপলক্ষে নিজের ফেসবুক পেজে পৃথক বাণী পোস্ট করেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে গুম সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এই আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের হিসাবে উল্লিখিত গুমের সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি হবে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ এখনো নিখোঁজ, অনেকেরই মৃতদেহ পাওয়া গেছে, আবার অনেক দিন পর কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’ তারেক রহমান লিখেছেন, এটি বিগত আওয়ামী শাসনামলের একটি বর্বর দুঃশাসনের নমুনা। উল্লিখিত সংখ্যা গুম হয়ে যাওয়া পরিবার কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আর অনেক আতঙ্কিত পরিবারই রিপোর্ট করার সাহস পায়নি।
তারেক রহমান লেখেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া ব্যক্তিদের ১০–১৫ বছরেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের গুমের ঘটনাগুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা। গুমের শিকার হয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষও। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকারবিরোধী অপরাধ। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহে আমি এই গুম হওয়া মানুষদের অসহায় পরিবারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।’
আর কোনো ব্যক্তি যাতে গুমের শিকার না হন, সে জন্য রাষ্ট্রকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি আরও লিখেছেন, ‘আর যেন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের মতো অমানবিক ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। রাজনৈতিক দর্শন বা রাষ্ট্রীয় সীমানাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার সব ব্যক্তি ও পরিবারকে আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ফখরুলের সহমর্মিতা
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী গুমের শিকার সব ব্যক্তি ও পরিবারের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি আজ ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশে গুমের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রবল প্রতিবাদী হলেও বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দেড় দশক ধরে কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে বিএনপিসহ বিরোধী নেতা–কর্মীদের পাইকারি হারে গুম করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামলে একদিকে সমাজ ও রাজনীতিতে মাফিয়াদের উত্থান, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী মানুষ জোরপূর্বক গুমের আতঙ্কে দিনরাত উদ্বিগ্ন থেকেছেন। সবার চোখের সামনে থেকে ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গুম করা হলেও পতিত আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের বিষয়টি সব আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করেছে।
একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে পোস্টে মন্তব্য করে ফখরুল আরও লেখেন, কারণ নির্বাচিত সরকারকে জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়।