প্রতিনিধি পটুয়াখালী

সোহাগ মৃধার বাড়িতে বেড়ে ওঠা প্রায় ৩৫ মণ ওজনের ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টি খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চান কৃষক সোহাগ মৃধা। শনিবার বিকেলে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পরিবারের সবাই সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন ষাঁড়টি। কালো কুচকুচে রঙের ষাঁড়টিকে ভালোবেসে সবাই ‘কালো মানিক’ বলে ডাকেন। গত বছর ষাঁড়টির দর উঠেছিল ১০ লাখ টাকা। কিন্তু বিক্রি করেননি কৃষক সোহাগ মৃধা। প্রায় ৩৫ মণ ওজনের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি বাজারে তুলবেন না তিনি। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শখের ষাঁড়টি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চান সোহাগ।

আদৌ ষাঁড়টি উপহার হিসেবে খালেদা জিয়া গ্রহণ করবেন কি না, জানেন না সোহাগ মৃধা। এরপরও ষাঁড়টি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকায় দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে। বাদক দল ও যাঁরা ষাঁড় নেওয়ার সময় ঢাকা যাবেন, তাঁদের জন্য বানানো হয়েছে বিশেষ গেঞ্জি। সঙ্গে থাকবে ব্যানার ও দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। এখন ষাঁড়টি সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। সোহাগের কালো মানিককে একনজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন দূরদূরান্তের মানুষ।

কৃষক সোহাগ মৃধার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী। আওয়ামী লীগের আমলে ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেওয়ার খবর দেখে তাঁর ইচ্ছা জাগে খালেদা জিয়াকেও তিনি তাঁর শখের ষাঁড়টি উপহার দেবেন।

সোহাগ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি কেনেন সোহাগ মৃধা। সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। পরে গাভিটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন আর বাছুরটিকে ভুসি, খৈল, সবুজ ঘাস, খড়কুটা খাইয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলে ছয় বছর ধরে লালন–পালন করেন। এটি লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি আর ওজন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কেজি।

শনিবার সোহাগের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল দেহের কুচকুচে কালো রঙের ষাঁড়টি সোহাগ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা মিলে সেবা-যত্ন করছেন। বাড়িতে কালো মানিককে দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় করেছেন।

সোহাগ মৃধা বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন। আমিও বিএনপিকে ভালোবাসি। ভাইরাল হওয়ার জন্য না, আবেগ থেকেই প্রিয় নেত্রীকে আমার প্রিয় কালো মানিককে উপহার দিতে চাই। আর কিছুই চাই না। এতে লাভ-লোকসানের কিছু নেই।’

সোহাগ মৃধার বাড়িতে বেড়ে ওঠা কালো মানিক ও তাঁর ছোট ছেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও দুটি শিশুসন্তান আছে। তাঁদের সহায়তায় ষাঁড়টি লালন-পালন করছেন ছয় বছর ধরে। তিনি জানিয়েছেন, ষাঁড়টি তিনি খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চান। প্রথমে তাঁর কথা স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু সোহাগ নাছোড়বান্দা। ষাঁড়টি উপহার দিতে কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় রওনা দেবেন।

সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছেলে বিএনপিকে ভালোবাসে। বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে যান। অনেক দিন আগে থেকে তিনি বলে আসছেন ষাঁড়টি খালেদা জিয়াকে উপহার দেবেন। সংসারের অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সোহাগের বাবা নেই। সামান্য জমি চাষাবাদ করে সংসারের খরচ চলে। খেয়েপরে কোনো রকম দিন চলে যায় তাঁদের।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বিএনপির কর্মী সোহাগ মৃধা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উপহার হিসেবে ষাঁড় উপহার দেওয়ার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ করেননি। এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।