প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফাঁসিতে ঝুলানো নারী প্রতিকৃতি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে দুদিন ধরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা এক নারীর প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা ও শাড়ি খুলে ফেলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
শনিবার কয়েক ব্যক্তির এ কাজের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে এটাকে নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ক্ষোভ হিসেবে প্রচার করা হলেও পরে এ ঘটনার যিনি ছবি তুলেছিলেন, তিনি তার পোস্টে এর ব্যাখ্যা দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও দেখে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারীরা বলছেন— নারীকে এভাবে জুতাপেটা করে তার পরনের কাপড় খুলে ফেলা, কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তি একের পর এক এসে জুতাপেটা করছেন প্রতিকৃতিতে। এরপর একসময় জুতাপেটার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিকৃতিটি দোল খেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তার পরনে থাকা শাড়িটি খসে পড়ে। এসময় দুই তরুণ এসে আবারও শাড়িটি পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারী কেউ কেউ বলছেন, এটা যদি শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবেও ঝুলিয়ে রাখা হয়, তারপরেও এটা নারীর প্রতি অবমাননার প্রতীক হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে নারীর অবমাননার সঙ্গে বা সংস্কার কমিশনের বিরোধিতার করে এই প্রতিকৃতি ঝুলানো হয়নি বলে দাবি তোলা হলেও— যদিও যিনি এই প্রতিকৃতির ছবিটি তুলেছিলেন, তিনি একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই ছবিটি আমি তুলেছিলাম ১ মে ২০২৫। ‘জাগ্রত জুলাই’ নামে একটি সংগঠন শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিকে ফাঁসি দিয়ে একটি কর্মসূচি পালন করে। আজকে ৩ মে ২০২৫, ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই ছবিটি আজকের দিবস উপলক্ষে তৈরি করা হয়েছে এবং কয়েকজন টুপি পাঞ্জাবি পরিহিত লোকজন এই ছবিটিকে জুতাপেটা করছে, এমন নিউজ ও সংবাদ পরিবেশন করতে দেখলাম। বাস্তবতা হচ্ছে— এই ছবিতে প্রতীকী আক্রমণ করার ঘটনা নারীর প্রতি হেনস্তা বা সহিংসতা নয়। এটা মূলত শেখ হাসিনার প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ফাঁসির ছবিকে যারা নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তারা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর। এদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করুন।’
এটাকে নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে কেন দেখতে হবে প্রশ্নে, ‘উই ক্যান’ এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসক বলতে এখন নারীর ইমেজ ভাবছি। একটা নারী সেটা যেই হোক, এভাবে হেনস্তা করা ও হেনস্তা হতে দেখার মধ্যে এক ধরনের চাল আছে। এটা দেখায় যে, নারীকে এভাবে বীভৎস করে পেটানো যায়।’ তিনি মনে করেন, যেকোনও স্ট্রাকচারকেও স্বৈরাচারের সিম্বলিক করা যায়, এরজন্য শাড়ি পরানোর দরকার হয় না। শাড়ি পরিয়ে নারীর ইমেজকে নিপীড়নের মধ্য দিয়ে নারীবিদ্বেষী আত্মা শান্তি পাচ্ছে। ওরা মনের ক্ষোভটা পূরণ করেছে। এখানে আমি হাসিনা বা স্বৈরতন্ত্র দেখছি না, এখানে মৌলবাদ ও পিতৃতন্ত্র এক হয়ে গেছে। এই সরকার যদি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে, তবে বুঝবো— তারা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য আব্দুল্লাহ জানান, কয়েক ব্যক্তি শনিবার এই ঝুলন্ত প্রতিকৃতিটি এখানে রেখে যায়। পরবর্তী সময়ে সেটি শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি বলেই সবাই জানে। হেফাজতের কর্মীরাও এটাকে শেখ হাসিনা ভেবেই জুতা মেরেছে।
ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা ‘জাগ্রত জুলাই’ নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে জানতে পেরেছি যে, তারা এটি লাগিয়েছে। আমরা তাদের কাউকে ফোনে পাচ্ছি না। তাদেরকে এটি সরিয়ে নিতে হবে। নয়তো আমরাই সরিয়ে ফেলবো।’ জুতাপেটা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি, সেখানে কেউ কেউ জুতা নিক্ষেপ করেছে। বাইরে এটা খুব বাজে বার্তা দিচ্ছে। আমরা জাগ্রত জুলাইয়ের কাউকে না পেলে এটা সরিয়ে ফেলবো।’